ক্যালিগুলার শাসনামলে রোমক সাম্রাজ্য

রোমক সাম্রাজ্য সূচনা করে অগাস্টাস। ১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অগাস্টাস রোমক সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন। সে আনুষ্ঠানিক ভাবে রোমক গণপ্রজাতন্ত্র বিলুপ্ত করেনি। ক্ষমতায় এসে সে পুনরায় সিনেট প্রতিষ্ঠা করে। তবে নিজেকে সিনেটের সর্বক্ষমতার উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। সে সিনেটের যেকোনো সিদ্ধান্তে ‘ভেটো’ দিতে পারতো। তার পদবী ছিলো ‘প্রিন্সেপস সেনাটাস’ (princeps senatus) বা প্রথম সিনেটর। সে প্রায় ৮২টি মন্দির নির্মাণ করে। রোমের বিখ্যাত গণস্নানাগারগুলো তার আমলে নির্মিত হয়েছিল। তিনি রোমের পুনর্গঠন এবং সংস্কারে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। 

প্যাক্স রোমানা

অগাস্টাস রোমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্রাট। তার শাসনামল রোমের স্বর্ণযুগ’ হিসেবে পরিচিত। অগাস্টাসের আবির্ভাব রক্তক্ষয়ী হলেও তিনি রোমের যুদ্ধনীতির অবসান ঘটান। অগাস্টাসের শাসনকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী ২০০ বছর রোমক সাম্রাজ্যে আর্থিক উন্নতি, সমৃদ্ধি, স্থিতিশীল রাজ্যবিস্তার, প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক গতিশীলতা বজায় ছিল। এ সময়কালকে ‘প্যাক্স রোমানা’ বলে। ১৮০ সালে মার্কাস অরেলিয়াসের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে প্যাক্স রোমানা সমাপ্তি ঘটে।

জুলিও-ক্লদিয়াস রাজবংশ

অগাস্টাস রোমকদের জুলিও-ক্লদিয়াস রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তার প্রথম স্ত্রী ক্লডিয়া পুলচ্রা মার্ক অ্যান্থনির সৎ-কন্যা। দ্বিতীয় স্ত্রী স্ক্রিবোনিয়া। অগাস্টাস-স্ক্রিবোনিয়ার কন্যার নাম জুলিয়া। তৃতীয় স্ত্রী লিভিয়া দ্রুসিলা। লিভিয়ার আগের সংসারে দুই সন্তান ছিল- টাইবেরিয়াস এবং দ্রুসাস। অগাস্টাস তার কন্যা জুলিয়ার সাথে টাইবেরিয়াসের বিয়ে দেন। এ রাজবংশে পাঁচ জন শাসক ছিলো- অগাস্টাস, তিবেরিয়াস, ক্যালিগুলা, ক্লডিয়াস ও নেরো।

খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তন ও বিস্তার

অগাস্টাস মারা গেলে তিবেরিয়াস রোমের সম্রাট হয়। তার শাসনামলের সবচেয়ে বড় ঘটনা খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তন। যীশু খ্রিস্ট দ্বিতীয় শতকের সবচে বিখ্যাত ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সমধিক পরিচিত ব্যক্তি। জন্মগতভাবে যীশু একজন ইহুদি। তবে তিনি নতুন আরেক ধর্ম প্রচার করেন। এ ধর্ম খ্রিস্ট ধর্ম নামে পরিচিত হয়।

খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল মূলত দুই খণ্ডে বিভক্ত- ওল্ড টেস্টামেন্ট ও নিউ টেস্টামেন্ট। ওল্ড টেস্টামেন্টে পৃথিবী সৃষ্টি থেকে যীশুর জন্ম পূববর্তী পয়গম্বরদের ইতিহাস এবং নিউ টেস্টামেন্টে যীশুর জীবনী, কর্মকাণ্ড ও শিক্ষা সম্পর্কে মার্ক, ম্যাথিউ, লুক ও জনের গসপেল ও অ্যাপসলদের ধর্ম প্রচার (Acts of the Apostles/ Acts) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।

ইসলাম ধর্মে যীশু হযরত ঈসা (আঃ) নামে একজন রাসূল যার উপরে আসমানী কিতাব ইনজিল নাজিল হয়েছিল। তবে ইসলাম ধর্মের হযরত ঈসা (আঃ) ও খ্রিস্টধর্মের যীশুর মধ্যে বেশ মিল ও অমিল রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম প্রধান পার্থক্য হলো ‘হলি ট্রিনিটি’ (Holy Trinity) বা পবিত্র ত্রিত্ব/ত্রয়ী মতবাদ যা এক ঈশ্বরের মধ্যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার মিলন বোঝায়। খ্রিস্ট ধর্মে যীশু মসীহ (Messiah) ও ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে স্বীকৃত যা ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত নয়। অবশ্য যীশু নিজেকে কখনও মসীহ বা ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে দাবী করেনি।

যীশুর জীবনী ও কর্মকাণ্ডের সাথে ইসরাইলের তিনটি শহরের বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- গ্যালিলি (Galilee), যুদেয়া (Judea) ও জেরুজালেম (Jerusalem)। গ্যালিলির নাজারেথ (Nazareth) বা যুদেয়ার বেথেলহেমে (Bethlehem) সম্ভবত ৬ সালে কুমারী মেরির (ইসলাম ধর্মে বিবি মরিয়ম নামে পরিচিত) গর্ভে যীশুর জন্ম হয়। এ অঞ্চল তখন রোম সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিলো। পিতৃহীন যীশুর জন্ম শুরু থেকে আজ পর্যন্ত একটি বিতর্কিত বিষয়। গর্ভাবস্থায় মেরির সাথে কাঠ মিস্ত্রি জোসেফের (Joseph) বিয়ে হয়।

এখানে জেনে রাখা ভালো যে, খ্রিস্ট ধর্মে আরো একজন বিখ্যাত জোসেফ আছে। সেই জোসেফ ইসলাম ধর্মে নবী হযরত ইয়াকুব (আঃ) (খ্রিস্টধর্মে জ্যাকব) এর পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ) পরিচিত। হযরত ইউসুফ (আঃ)ও একজন নবী। তবে তাই মেরির স্বামী জোসেফ আর জ্যাকবের পুত্র জোসেফ এক নয়।

যীশুর জন্মের পরে তিন জন জ্ঞানী (Three Wise Men) তাঁর জন্য তিনটি উপহার নিয়ে আসেন। এরা ‘ম্যাজাই’ (Magi) নামে পরিচিত। এই তিন জনের নাম- মালকিওর (Melchior), ক্যাসপার (Caspar) ও বালথাজার (Balthazar)। উপহার তিনটি হলো- সোনা, লবান/ ধুনো (frankincense) ও গন্ধরস (myrrh)।

ব্যাপটাইজ শব্দটির অর্থ খ্রিস্টধর্মে দীক্ষীত করা। খ্রিস্ট ধর্মে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পানিতে চুবিয়ে কাউকে পবিত্র করার নাম ব্যাপটাইজেশন। এ পদ্ধতির সাথে ইহুদি ধর্মের ‘ভিলা’ (tvilah) ও ইসলাম ধর্মের ‘ওজু’র মিল রয়েছে। তবে পার্থক্য হলো ব্যাপটাইজেশন জীবনে একবার করতে হয় আর ভিলা ও ওজু প্রতিবার পবিত্রকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। ১৮ বছর বয়সে যীশুর কাজিন জন দ্য ব্যাপটিস্ট (John the Baptist) তাকে ইহুদি থেকে খ্রিস্টধর্মে ব্যাপটাইজ (baptize)করেন।

যীশুর জন্মের সময় জেরুজালেম ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহ ইহুদি ধর্মালম্বী (Judaism) অধ্যুষিত ছিল। ইহুদিরা মোজেজ (Moses) এর অনুসারি। ফলে যীশুর ধর্মপ্রচার শুরু হলে প্রভাবশালী ইহুদি ধর্মযাজকরা কোন ভবে তা মেনে নিতে পারেনি। নতুনের সাথে পুরাতনের চিরাচরিত একটি বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্ক আছে। ধর্ম অথবা অন্য যে কোন বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সে বিদ্বেষ আরো অনেক বেশী প্রকট।

জীবদ্দশায় যীশু বেশ কিছু অলৌকিক ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন বলে জানা যায়। কানাতে (Cana) এক বিয়ে বাড়িতে খাবার কম পড়ে গেলে যীশু পাঁচ টুকরা রুটি, দুটি মাছ ও পানি থেকে মদ বানিয়ে সবাইকে ভোজন করিয়ে ছিলেন। তিনি অন্ধদের চোখে আলো, পঙ্গুদের সুষ্ঠু জীবন ফিরিয়ে দিতে পারতেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তাঁর সবচে সব অলৌকিক ক্ষমতার উদাহারণ হলো মৃতকে জীবিত করে তোলা। তিনি লেজারাস (Lazarus) নামের একজনকে মৃত থেকে জীবিত করেন বলে বর্ণিত আছে।

যীশুর বার জন (সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে) প্রধান সহচরের প্রত্যেকে অ্যাপসল বা শিষ্য নামে পরিচিত। এদের বর্ণনায় যীশুর জীবনী, কর্মকাণ্ড ও শিক্ষা  সম্পর্কে জানা যায়। এ সব বিবরণ গসপেল নামে পরিচিত। গসপেল শব্দের অর্থ ‘সুসংবাদ’। বার জনের মধ্যে মার্ক, ম্যাথিউ (অন্য নাম লেভাই), লুক ও জন নামক চার জনের বিবরণ স্বতঃসিদ্ধ বলে বিবেচিত।

অন্য বিখ্যাত শিষ্যরা হলেন পিটার (Peter), জুডাস (Judas), এন্ড্রু (Andrew), বার্থোলোমেউ (Bartholomew) (নাথানিয়েল নামেও পরিচিত), আলেফউসের পুত্র জেমস (James), যেবেদির পুত্র জেমস,  থাড্ডাউস (Thaddaeus) (জুদ নামেও পরিচিত), ফিলিপ (Philip), ম্যাথিয়াস (Matthias), সাইমন (Simon) ও থমাস (Thomas)।

৩০ বা ৩৩ সালে যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। সে সময় যুদেয়া রাজ্য (বর্তমান ইসরাইল) রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। সে সময়ে যুদেয়া রাজ্যের রাজা মহান হেরডের এক জোতিষী তাকে ভবিষ্যত বাণী করেছিল যে, তার রাজ্যে শক্তিশালী এমন একজন রাজা জন্মাবে যে সব রাজাদের রাজা হবে। এ কথা শুনে হেরড তার রাজ্যের ২ বছরের কম বয়সী সকল শিশু হত্যাও করেছিল। এ সময়ে জোসেফ যীশুকে দিয়ে গ্যালিলিতে পালিয়ে গিয়ে যীশুর প্রাণ রক্ষা করেছিল।

ইহুদি ধর্মে মিশরের ফারাওদের হাত থেকে ইহুদিদের দাসত্বের মুক্তির দিনটাকে স্মরণ করে এপ্রিল মাসে ৭/৮ দিন ব্যাপী আনন্দ উদযাপন করা হয়। একে পাসওভার (Passover) বলে। দিনটি খ্রিস্টানদের কাছেও পবিত্র দিন। এই পাসওভারের সময়ে রাতের খাবার শেষ করে ফেরার পথে গেথসেমানে বাগানে (Garden of Gethsemane) যীশুর এক শিষ্য জুডাস ঘুষের বিনিময়ে ধরিয়ে দেয় জুডাস। সে যীশুর কপালে চুমো দিয়ে তাঁকে চিহ্নিত করে। আজো তাই ‘জুডাস কিস’ বিশ্বাসঘাতকতার বাগধারা হিসেবে পরিচিত।

যীশু বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ হলো ধর্মদ্রোহ (blasphemy) ও রাজদ্রোহ (treason)। তবে কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ধর্মদ্রোহ প্রমাণিত হলে তাকে হয়তো সে সময়কার রীতি অনুসারে পাথর ছুড়ে মারা হতো। ইহুদি যাজকদের কাউন্সিল (Sanhedrin) তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ কাউন্সিলের প্রধান ছিল কাইয়াফাস (Caiaphas)।

যে স্থানে যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে মারা হয় সে স্থানের নাম গলগোথা (Golgotha)। যীশু তাঁর শেষ রাতের খাবারে (Last Supper) যে পাত্র ব্যবহার করেছিল তা পবিত্র পাত্র (Holy Grail) নামে পরিচিত। ক্রুশবিদ্ধ হলে জোসেফ অব অ্যারিমাথিয়া (Joseph of Arimathea) ঐ পাত্রে যীশুর রক্ত সংগ্রহ করেন। এই জোসেফ যীশুকে সমাধিস্থ করে। যীশুর হত্যা কালে পন্টিয়াস পাইলেট যুডেয়ায় রোমক গভর্নর, মহান হেরডের ছেলে হেরড এন্টিপাস গ্যালিলি ও পেরেয়ার এবং টাইবেরিয়াস রোমের শাসক ছিল।

যীশুকে সমাধিস্থ করার তিন দিন পরের রবিবারে তাঁর পুনরুত্থান (resurrection) ঘটে। এই দিনটি খ্রিস্ট ধর্মে ঈস্টার সানডে (Easter Sunday) নামে পরিচিত। এ দিনে খ্রিস্টানরা একে অপরকে ডিম বা ডিমের আকৃতির চকলেট উপহার দেয়। ডিম নবজীবনের প্রতিক হিসেবে বিবেচিত।

পুনরুত্থানের পরে যে নারী যীশুকে প্রথম দেখে তাঁর নাম মেরি ম্যাগডালেন (Mary Magdalene)। মেরি ম্যাগডালেনের সাথে যীশুর সম্পর্ক নিয়ে নানা মত রয়েছে। কেউ তাকে যীশুর প্রেমিকা আবার কেউ তাকে যীশুর স্ত্রী মনে করে। যীশুর সংস্পর্শে আসার আগে মেরি পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত ছিল। যেদিন যীশু প্রথম তার বাড়িতে যান, সেদিন মেরি যীশুর পা ধুয়ে মাথার চুল দিয়ে মুছে দিয়েছিল।  যীশুর ক্রুশবিদ্ধ হবার স্থানে মেরি ক্রুশের কাছে ছিল। তাকে সমাধিস্থ করা ও তাঁর পুনরুত্থানের চাক্ষুষ স্বাক্ষী হিসেবে মেরি ইতিহাসে খ্যাত হয়ে আছে।

যীশুর মৃত্যুর পরে অনেক দিন ধরে খ্রিস্টানরা প্রকাশ্যে ধর্মের কথা বলতে পারতো না। তাদের ধর্ম প্রকাশ পায় এমন কোন কিছু ব্যবহার করতে পারতো না। এ জন্য তারা যীশু ও ধর্ম বোঝাতে ইকথাস (ichthys) শব্দ ও এর প্রতীক ব্যবহার করতো। গ্রিক ইকথাস শব্দের অর্থ ‘মাছ’।  গ্রিক ভাষায় এ শব্দটি দিয়ে তখন Iesos Christos Theou Huios Soter বা Jesus Christ Son of God বোঝাতো। সে সময়ে তাদের অনেকে ‘কি-রো’ (Chi-Rho) প্রতিকও ব্যবহার করতো। কি-রো হলো গ্রিক বর্ণ  ‘কি’ (Χ) ও ‘রো’ (Ρ) এর যুক্তাক্ষর যা গ্রিক ভাষায় যীশুর নামে (ΧΡΙΣΤΟΣ, Christos) বোঝাতো।

ইংরেজি ‘টি’- অক্ষরের মতো দেখতে মূলতঃ কাঠ নির্মিত ফ্রেমে মানুষকে পেরেক ঠুকে আটকে ঝুলিয়ে রেখে হত্যা করার পদ্ধতি ক্রুসিফিকশন (crucifixion) এবং কাঠের ঐ অবকাঠামোটি ‘ক্রস’ নামে পরিচিত। ক্রুসিফিকশনে মানুষ হত্যা করা একটি প্রাচীন পদ্ধতি। প্রাচীন মিশরীয়, আসিরিয় (Assyria) সভ্যতা থেকে তৎকালীন পারস্য, গ্রিক ও রোমান সভ্যতা পর‌্যন্ত সব সাম্রাজ্যেই বিদ্রোহ দমন করার জন্য বিদ্রোহীদেরকে জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, ক্রুসবিদ্ধ ও গিলোটিনে মাথা কেটে হত্যা করার রীতি প্রচলিত ছিল। যীশুকে ক্রসে ঝুলিয়ে হত্যা করার পরে ক্রস ও ক্রুসিফিকশন সার্বজনীন ধর্মীয় পরিচিতি লাভ করে এবং খ্রিস্টানরা ধর্মীয় প্রতিক হিসেবে ক্রস ব্যবহার করতে শুরু করে।

খ্রিস্ট ধর্মের ক্রস

‘ক্রস’ চিহ্নটি এখন সারা বিশ্বে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় প্রতিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দুটি রেখা মধ্যবিন্দু বরাবর উল্লম্ভভাবে প্রতিস্থাপিত হলে গণিতের যোগ চিহ্নের মতো যে প্রতীক সৃষ্টি করে সেটি হলো ক্রস। গির্জা, ক্যাথিদ্রাল, খ্রিস্টান মিশনারিজ, বাড়ী, গাড়ি, গলায় ইত্যাদিতে খ্রিস্টানরা ক্রস ঝুলিয়ে রাখে।

যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগে ক্রসের মতো আরো দুটি প্রতীকের কথা জানা যায়। এদের একটির নাম ‘আঁখ’ (Ankh), অন্যটি ‘স্বোয়াস্তিকা’ (swastika)। আঁখকে ল্যাটিন ভাষায় বলে ‘ক্রুস আনসাতা’ (crux ansata) আর বাংলায় ‘হাতলওয়ালা ক্রস’। এ প্রতীকে উল্লম্ব রেখার উপরের দিকে একটি লুপের মতো থাকে যা দেখতে চোখের মতো। প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিকসে এ প্রতীক ব‍্যবহৃত হতো। পরবর্তীকালে কপটিক খ্রিস্টানরা (Coptic Christian) এ প্রতীক ব‍্যবহার শুরু করে।  কপটিক শব্দটির অর্থ ‘মিশরীয়’। মিশরের খ্রিস্টানদেরকে কপটিক খ্রিস্টান বলে। ‘স্বোয়াস্তিকা’র ল‍্যাটিন নাম ‘ক্রস গামাতা’ (crux gammata)। একে ক্রসের গোপন প্রতীকও বলে। জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর প্রতিক ছিল স্বোয়াস্তিকা। তাছাড়া, হিন্দু, জৈন এবং বুদ্ধ ধর্মেও স্বোয়াস্তিকার ব‍্যবহার আছে।

চার ধরণের ক্রসের প্রচলন বেশী- গ্রিক ক্রস (crux quadrata), ল্যাটিন ক্রস (crux immissa), ঋষি এন্থনির ক্রস (crux commissa) ও ঋষি এন্দ্রুয়ের ক্রস (crux decussata)। গ্রিক ক্রসে উল্লম্ব ও আনুভূমিক দুই বাহুই সমান সাইজের হয়। এটা পুরোপুরি যোগ চিহ্নের মতো। অন্যদিকে, ল্যাটিন ক্রসে উল্লম্ব বাহুটি আনুভূমিক বাহু হতে লম্বা হয়। ঋষি এন্থনির ক্রস দেখতে ইংরেজি বড় হাতের টি-অক্ষরের মতো, আর এক্সের মতো দেখতে  ঋষি এন্দ্রুয়ের ক্রস।

ক্রসের মতো দেখতে খ্রিস্টানদের আরো একটি প্রতীক আছে- ‘ক্রুসিফিক্স’ (crucifix)। ক্রসের উপর যখন যিশুখ্রিস্টের পেরেকমারা ঝুলন্ত দেহটি প্রদর্শন করা হয় তখন তাকে বলে ক্রুসিফিক্স। ক্রুসিফিক্স মূলত প্রার্থনার স্থানে ব্যবহৃত হয়। রোমান রীতিতে ঝুলন্ত যিশুর মাথায় রাজমুকুট পড়ানো থাকে, কিন্তু গোথিক (Gothic) স্টাইলে রাজমুকুটের পরিবর্তে যিশুর মাথায় থাকে কণ্টকমুকুট। মধ্যযুগে ইউরোপিয় শিল্প-সাহিত্যে জার্মানির পূর্বাঞ্চলের গোথ জাতির প্রভাবকে গোথিক স্টাইল বলা হয়।

ক্রস ও ক্রুসিফিক্সের প্রতীক দুটির মধ‍্যে আরেকটি পার্থক্য, ক্যাথলিকরা ক্রস ও ক্রুসিফিক্স দুটিই ব্যবহার করে। তবে প্রোটেস্ট্যান্টরা শুধু ক্রস ব্যবহার করে।

যিশুখ্রিস্ট মারা যাওয়ার পরবর্তী ৩০০ বছরে খ্রিস্টধর্ম তেমন একটা প্রসার লাভ করেনি। খ্রিস্টধর্মে প্রাণ সঞ্চার করে যে রোমান সম্রাট তাঁর নাম মহান কনস্ট্যানটাইন। এর ফলশ্রুতিতে চতুর্থ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে খ্রিস্টানদের মধ্যে ক্রসের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

যীশুর হত্যার মধ্যে কয়েক বছরের মধ্যে তিবেরিয়াসের শাসনকাল শেষ হয়। অবশ্য এর বেশ আগেই তিবেরিয়াস রাজ্য শাসন থেকে দুরে সরে গিয়েছিলো। ২৩ সালে তার ছেলে দ্রুসাস মারা যাওয়ার পর থেকে সে একাকী থাকতে শুরু করে। অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে ক্যাপরিতে (Capri) তৈরি এক হারেমে সে বসবাস করতে শুরু করে। এ সময়ে রোমান প্রশাসকদের প্রধান সেজানুস (Sejanus) তাঁর হয়ে রাজকর্ম পরিচালনা করতে থাকে। এ সুযোগে ক্ষমতার লোভ সেজানুসকে অন্ধ করে তোলে। অবস্থা বেগতিক থেকে টাইবেরিয়াস পালিত পৌত্র জার্মেনিকাস (Germanicus) ও এগ্রিপিনার (Agrippina) পুত্র ক্যালিগুলাকে (Caligula) রোমান শাসন ক্ষমতায় নিয়ে আসে। এ ক্যালিগুলার ষড়যন্ত্রেই বালিশ চাপায় টিবেরিয়াসের মৃত্যু হয়। ৩৭ সালে ক্যালিগুলা রোমক সম্রাট হয়।

ক্যালিগুলা

ক্যালিগুলার আসল নাম গাইয়াস জুলিয়াস সিজার। ক্যালিগুলা ছিলো গাইয়াসের ডাকনাম। ক্যালিগুলা ছোট সাইজের ইউনিফর্ম এবং হাতে তৈরি বুট জুতা পড়তো। এই ধরণের বুটকে ‘ক্যালিগে’ (caligae) বলতো। এ জন্য তাকে ‘ক্যালিগুলা’ বলা হতো।  সে রোমক জেনারেল জারমেনিকাস ও ১ম রোমক সম্রাট অগাস্টাসের নাতি এগ্রিপিনার (জ্যেষ্ঠ্য) সন্তান। তিবেরিয়াস ছিলো জারমেনিকাসের চাচা ও পালক পিতা। এ সূত্রে তিবেরিয়াস ক্যালিগুলার দাদা।

ক্যালিগুলার শাসনকাল মাত্র তিন বছর দশ মাসের। এ সময়কালে সে সুখ্যাতির চেয়ে কুখ্যাতি বেশি অর্জন করেছে। সে বদমেজাদি, কামুক ও পাগলাটে ছিল। সে আনন্দের জন্য মানুষ হত্যা করতো। সে তার তিন বোন- দ্রুসিলা, জুলিয়া এগ্রিপিনা ও লিভিলার সাথে সহবাস করতো ও তাদেরকেও অন্যদের বিছানায় পাঠাতো। রাজসভাকে সে একরকম পতিতালয় বানিয়েছিলো। সে তার ঘোড়া ইনসিতাতাস-কে কনসাল পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলো। সে ঘোড়াটাকে পাদ্রী পদে বসিয়েছিলো।  লোকদের পূজা করানোর জন্য সে জেরুজালেম মন্দিরে তার মূর্তি বসাতে চেয়েছিলো। এ কারনে রোমক সিনেটরদের সাথে ক্যালিগুলার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

সিনেটরদের ষড়যন্ত্রে ক্যালিগুলাকে হত্যা করা হয়। রোমক সম্রাটদের দেহরক্ষী দল প্রাতোরিয়ান গার্ডের যে সদস্যকে একদিন সে ‘মেয়েলি’ বলে জনস্মুখে অপমান করেছিল, সেই কাসিয়াস চায়েরিয়া (Casius Chaerea) তাকে নির্মম ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। তার মৃত্যুর পরে সিনেটররা পুনরায় গণপ্রজাতন্ত্রী রোম গঠনের চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। ক্যালিগুলার মৃত্যুর পরে রোমক সম্রাট হয় তার চাচা ক্লডিয়াস।

ক্যালিগুলার শাসনামলে রোমক সাম্রাজ্য
ক্যালিগুলার শাসনামলে রোমক সাম্রাজ্য

ক্লডিয়াস

ক্লডিয়াসের পুরো নাম তিবেরিয়াস ক্লডিয়াস সিজার অগাস্টাস জার্মেনিকাস। সে অগাস্টাসের তৃতীয় স্ত্রী লিভিয়া দ্রুসিলার পুত্র নেরো ক্লডিয়াস দ্রুসাসের সন্তান। শারিরীক ভাবে খুব একটা সমর্থবান না হলেও ক্লডিয়াস সুশাসক ছিলেন। সে পয়োনিষ্কাষণ ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি করে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে এবং ক্যালিগুলার অযাচিত শুল্ক ব্যবস্থাপনা রদ করে। ক্লডিয়াস ধর্মান্তকরণ (proselytism) খুবই অপছন্দ করতো। যে সব ইহুদি রোমে ধর্মান্তকরনের চেষ্টা করেছিলো সে তাদেরকে রোম থেকে তাড়িয়ে দেয়। ক্লডিয়াসের সময়ে রোমান সাম্রাজের প্রসার বেশ প্রসার ঘটে। ৪৩ সালে সে চার লিজিয়ন সৈন্য দিয়ে ওউলাস প্লেউটিয়াসকে (Aulus Plautius) ব্রিটেন দখলে প্রেরণ করে। রোমকরা বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জ দখলের পরে এর নাম দিয়েছিলো বৃটানিয়া। তার সময়ে উত্তর আফ্রিকাও রোম সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।

ক্লডিয়াস চতুর্থ স্ত্রী  ছিলো ক্যালিগুলার বোন (সম্পর্কে ক্লডিয়াসের ভাতিজি) জুলিয়া এগ্রিপিনা। তার আগের স্বামীর ছেলে নেরো। ক্লডিয়াস নেরোকে পুত্র হিসেবে দত্তক নিয়েছিলো। অন্যদিকে, ক্লডিয়াসের তৃতীয় স্ত্রী ছিলো ভ্যালেরিয়া মেসালিনা। মেসালিনা চারিত্রিক দূর্বলতার জন্য কুখ্যাত ছিলো। ক্লডিয়াসের সাথে সম্পর্ক ছেদ করে সে গাইয়াস সিলিয়াসকে বিয়ে করে।  ফলশ্রুতিতে ক্লডিয়াস উভয়কে জনসম্মূখে হত্যা করে। মেসালিনার ছেলে ব্রিটানিকাসকে ক্লডিয়াস পছন্দ করতো। ইচ্ছে ছিলো তার পরে সে সম্রাট হবে। সৎ মা এগ্রিপিনা তা মেনে নিতে পারেনি। তাই নিজের ছেলে নেরোকে ক্ষমতায় বসাতে সে মাশরুমে বিষ মিশিয়ে ক্লডিয়াসকে হত্যা করে।

নেরো

ক্যালিগুলার পরে রোমক ইতিহাসের দ্বিতীয় কুখ্যাত শাসক নিরো ৫৪ সালে রোমের ক্ষমতায় বসে। নেরোর প্রথম পাঁচ বছর রোমক জনগণের ‘স্বর্ণযুগ’ ছিলো। সে সিনেটেরদের হাতে অনেক ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং খেলাধুলার মতো নানা ধরনের প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে সাধারণ লোকজনের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

কিন্তু এই অবস্থা বেশি দিন স্থায়ী ছিল না। ভয়ঙ্কর সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতা তার এই সাফল্যকে অচিরেই ম্লান করে দেয়। এই নিষ্ঠুরতা তার শাসনকালের বাকিটা সময়জুড়েই অব্যাহত ছিল। যে মা বিষ দিয়ে স্বামীকে হত্যা করে ছেলেকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো, সাবিনাকে বিয়ে করা নিয়ে এক মতবিরোধের জেরে নেরো সেই মাকেই হত্যা করে। সে তার সৎ ভাই ও স্ত্রীদেরকেও হত্যা করেছিলো।

বৌদিকা বিদ্রোহ

খ্রিস্টপূর্ব ৫৪ সালে জুলিয়াস সিজার ব্রিটেন দখল করেছিলো। সে সময়ে সে সব আদিবাসী গোত্র রোমকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলো তাদের মধ্যে ব্রিটেনের নরফোক (Norfolk) অঞ্চলের কেল্টিক ইসেনি (Iceni) গোত্র অন্যতম। রোমে ক্লডিয়াসের শাসনকালে সেই ইসেনি গোত্রের রাজা ছিলো প্রাসুতাগাস (Prasutagus)। ক্লডিয়াসের সময়ে ব্রিটেন রোমকদের অঙ্গভূক্ত হলে প্রাসুতাগাস বিপুল পরিমাণ শুল্ক প্রদানের শর্তে রাজ্য চালাতে থাকে। ৬০ সালে প্রাসুতাগাস মারা যায়।

প্রাসুতাগাসের স্ত্রীর নাম বৌদিকা (Boudicca)। কেল্টিকদের এক দেবীর নাম ছিলো বৌদিগা (Boudiga), যার অর্থ ‘বিজয়’। এ থেকে বৌদিকা নামটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাসুতাগাসের মৃত্যুর পরে রোমকরা তার সব সম্পত্তি আত্মসাৎ করে। প্রতিবাদে প্রাসুতাগাসের স্ত্রীর বৌদিকা রোমকদের বিরুদ্ধে ‍যুদ্ধ (৬০-৬১ সাল) শুরু করে।

প্রথম দিকে যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেও রোমক গভর্নর সুতোনিয়াসের সামনে বেশি দিন টিকতে পারেনি বৌদিকা বাহিনী। বৌদিকা জনসম্মুখে লজ্জাজনকভাবে রোমকদের হাতে অপদস্ত হয়, তার মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। পরাজিত হলেও ব্রিটেনের নারী বীরত্ব গাঁথায় আজও বৌদিকার নাম উঠে আসে।

রোমের আগুন

৬৪ সালে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে রোমের বেশিরভাগ এলাকা পুড়ে গিয়েছিল। একটা গুজব আছে যে, নিরোই নাকি এই আগুনটা লাগিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, পরে এও দাবী করা হয় যে, রোম নগরী যখন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছিল, তখন সে বাঁশি/ বেহালা বাজাচ্ছিলো। এই তথ্য সঠিক হতে পারে না। কারণ রোমক সাম্রাজ্যের আমলে বাঁশি বা বেহালার কোন অস্তিত্ব ছিল না। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, রোমের অগ্নিকাণ্ডের জন্যে নিরো দায়ী নন। কারণ এই আগুনে নিরোর নিজের প্রাসাদও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তবে আগুন লাগানোর অভিযোগে নেরো রোমের খ্রিস্টানদের দায়ী করে অনেক খ্রিস্টান হত্যা করেছিলো।

নিরো থিয়েটার করতে খুব পছন্দ করতো। সে বীণা জাতীয় বিশেষ একটি বাদ্যযন্ত্র বাজাতো, গান গাইতো, কবিতা লিখতো এবং মঞ্চে অভিনয়ও করতো। তবে এসব বিষয়ে একজন রোমক সম্রাটের আগ্রহকে খুব ভালোভাবে দেখেনি সিনেট। তারা মনে করতেন এটা সম্রাটের জন্য খুবই লজ্জার ও মানহানিকর।

জেরুজালেমে ইহুদি বিদ্রোহ    

নেরো গ্রিক নাগরিক গেসিয়াস ফ্লোরাসকে (Gessius Florus) ৬৪ সালে যুডেয়ার শাসন কর্তা নির্বাচিত করে। ফ্লোরাস ইহুদিদের ঘৃণা করতো। সে যুডেয়ার গ্রিকদেরকে সবসময় ইহুদিদের চেয়ে বেশী সুযোগ সুবিধা দিতো। তার মদদে কিছু গ্রিক ঐ এলাকায় ইহুদি নিধন শুরু করে। বঞ্চিত ইহুদিরা ফ্লোরাসের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে পাল্টা হত্যা শুরু করে। ৬৬ সালে ইহুদি-রোমান সংঘর্ষ শুরু হয় এবং তা দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এটা ইহুদি-রোমক প্রথম যুদ্ধ (৬৬-৭৩) নামে পরিচিত।

ফ্লোরাসকে সরিয়ে সেখানে মার্কাস এন্টোনিয়াস জুলিয়ানুসকে (Marcus Antonius Julianus) পাঠানো হয়। পাশাপাশি বিদ্রোহ দমনের জন্য ৬৭ সালে নেরো ভেসপাসিয়ান (Vespasian) ও তাঁর পুত্র টাইটাসের (Titus) নেতৃত্বে সেখানে ৬০,০০০ সৈন্য প্রেরণ করে। এ ভেসপাসিয়ান ও টাইটাস পরে রোমক সম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেছিলো। জেরুজালেম দখল করতে রোমকদের তিন বছর সময় লেগেছিল। ৭০ সালে ‘সেকেন্ড টেম্পল’ (Second Temple) ধ্বংসের মধ্য দিয়ে জেরুজালেম অভিযান শেষ হলেও মাসাডা (Masada) দুর্গ দখল করতে রোমকদের আরো তিন বছর সময় লাগে। এ যুদ্ধে ১,১০,০০০ ইহুদি নিহত হয়, ৯৭,০০০ ইহুদিকে বন্দী করা হয়। কয়েক হাজারকে দাস হিসেবে রোমে নিয়ে যাওয়া হয়।

জুলাই বা আগস্ট মাসের টিসা বিআভ (Tisha B’Av) ইহুদি ধর্মের সবচে শোকের দিন। এ দিনে তারা ২৫ ঘণ্টা উপোস করে। নব্য-ব্যবিলনীয় সভ্যতার দ্বিতীয় নেবুচাঁদনেজার (Nebuchadnezzar II) কর্তৃক সলোমনের টেম্পল (Solomon’s Temple) এবং রোমকদের হাতে সেকেন্ড টেম্পল ধ্বংসের স্মৃতিতে আজও ইহুদিরা টিসা বিআভ পালন করে।

সিনেটের সাথে নেরোর বিরোধিতা চরমে পৌঁছায়। সিনেট তাকে ‘জনগণের শত্রু’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর অর্থ হচ্ছে তাকে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই তাকে হত্যা করা হবে। নেরো পালিয়ে গিয়ে গ্রামের এক ঘরে আত্মগোপন করে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।  রক্ষীরা যখন তার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল তখন সে ‘কোয়ালিস আর্টিফেক্স পেরেও’ (qualis artifex pereo) বলে চিৎকার করতে করতে আত্মহত্যা করেন। ৬৮ সালে নেরোর মৃত্যুর সাথে রোমক সাম্রাজ্যে জুলিও-ক্লদিয়াস রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে।

(ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর গল্প চলবে)

পৃথিবীর গল্প পরম্পরা