বাইজানটাইন-সাম্রাজ্য

বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের উত্থান হয় পশ্চিম রোমক সভ্যতার পতনের সূচনা থেকে। রোমক সম্রাট ডাইক্লিশান ২৮৫ সালে প্রথম রোমক সাম্রাজ্যকে প্রথম পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত করে। পরে তিনি আবার ২৯৩ সালে একে চার ভাগে বিভক্ত করে চার জন সম্রাটের রাজ্যভূক্ত করে। চার ভাগে বিভক্ত এ রোমক সাম্রাজ্যের ফ্রান্স থেকে বৃটেন পর্যন্ত অঞ্চলের সম্রাট কনসট্যানটিআসের মৃত্যুর পরে পুত্র মহান কনস্ট্যান্টাইন এ অঞ্চলের হাল ধরে।

বাইজানটাইন-সাম্রাজ্য

কনস্ট্যান্টিয়ান, ভ্যালেন্টিনিয়ানিক, থিওডোসিয়ান ও লিওনিদ রাজবংশ

মহান কনস্ট্যান্টাইনের পিতা সম্রাট কনসট্যানটিআসের বংশের শাসকগণ কনস্ট্যান্টিয়ান রাজবংশ নামে পরিচিত। ৩০৫ সালে ডাইক্লিশান রোমক সম্রাটের পদ থেকে সরে গেলে বাকী রাজ্যগুলোতে যখন নৈরাজ্য বাড়তে থাকে, তখন মহান কনস্ট্যান্টাইন একে একে সে সব অঞ্চলে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। ৩৩০ সালে সে তুরস্কের বাইজানটিয়ামে (বর্তমান ইন্তানবুল) তার রাজধানী স্থাপন করে শহরটির নাম বাইজানটিয়াম থেকে পরিবর্তন করে কনস্ট্যান্টিনোপল রাখে। ৩৩৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে রোমক সম্রাট ছিলো। এ বংশের শেষ শাসক জুলিয়ান ৩৬৩ সালে মারা গেলে তার দেহরক্ষক জোভিয়ান শাসন ক্ষমতা করায়ত্ত্ব করতে চেয়েছিলো। কিন্তু পারেনি।

৩৬৪ সালে পশ্চিমের সম্রাট ১ম ভ্যালেনতিনিয়ান তার ভাই ভ্যালেনসকে পূর্ব রোমক সাম্রাজ্যে অধিষ্ঠিত করে। সে ১৪ বছর এ অঞ্চল শাসন করে। এ সময়কালের বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য এক খ্রিস্টান ঋষির নাম মহান বাসিল। সে খ্রিস্ট ধর্মের পূর্বাঞ্চলীয় বিশ্বাস গ্রিক অর্থোডক্সি-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এ বিশ্বাসের অন্যতম পাদপীঠ ছিলো হাগিয়া সোফিয়া

ভ্যালেনসের পরে রোমক সাম্রাজ্যে প্রায় ৭০ বছরের রাজবংশ গড়ে তোলে মহান থিওডোসিয়াস। থিয়োডিয়াস অখণ্ড রোম সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট। ৩৯৫ সালে তার দুই পুত্র- হোনোরিয়াস ও আর্কাডিয়াস দ্বিতীয় বারের মতো রোম সাম্রাজ্যকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। হোনোরিয়াস পশ্চিম রোম সাম্রাজ্য ও আর্কাডিয়াস পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের শাসক হয়েছিল। ৪৫৭ সাল পর্যন্ত থিওডোসিয়াস রাজবংশ পূর্ব রোমক সাম্রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল।

এর পরে পূর্ব রোমক সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসে লিও ১ম। সে লিওনিদ রাজবংশের শাসন চালু করে। ৪৭৬ সালে পশ্চিম রোম সাম্রাজ্য পতন হলেও পূর্ব রোম সাম্রাজ্য ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত টিকে ছিলো। এই পূর্ব রোম সাম্রাজ্য বাইজানটাইন সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। ৫১৮ সাল পর্যন্ত বাইজানটাইন সাম্রাজ্যে এ লিওনিদ রাজবংশের শাসন বজায় ছিলো। 

জাস্টিনিয়ান রাজবংশ (৫১৮-৬০২)

জাস্টিনিয়ান রাজবংশের পাঁচ সম্রাটের মধ্যে সবচে বিখ্যাত সম্রাটের নাম মহান জাস্টিনিয়ান। সে হারানো পশ্চিম রোমক সাম্রাজ্য পুনরায় উদ্ধারের চেষ্টা করে। পুরোপুরি সফল না হলেও সে যাযাবর ভ্যান্ডাল ও অস্ট্রাগোথদের কাছ থেকে উত্তর আফ্রিকা, সিসিলি ও ইটালির কিছু অংশ উদ্ধার করেছিলো।

জাস্টিনিয়ানের আরো একটি উল্লেখ্যযোগ্য কাজ হলো, সে রোমক ‘করপাস জুরিস সিভিলিস’ নামে রোমান আইন পুনরায় সংকলন করে। একে ‘জাস্টিনিয়ান কোড’ও বলা হয়। তুরস্কের বিখ্যাত হাগিয়া সোফিয়া (৫৩৭) তার সময়ে পুনঃনির্মিত হয়েছিলো। খ্রিস্ট ধর্মের পূর্বাঞ্চলীয় অর্থোডক্সিতে সে ‘ঋষি সম্রাট জাস্টিনিয়ান‘ নামে খ্যাত। জাস্টিনিয়ানের স্ত্রী থিওডোরা পূর্বাঞ্চলীয় অর্থোডক্সিতে আরেক বিখ্যাত নাম। সেও ঋষি হিসেবে খ্যাত।

জাস্টিনিয়ানের সময়ে বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপলে রথের দৌড় প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে ভয়ানক এক দাঙ্গা বেধেছিলো। ইতিহাসে এ দাঙ্গা ‘নিকা দাঙ্গা’ (৫৩২) নামে পরিচিত। এ দাঙ্গায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।

হেরাক্লিয়ান রাজবংশ (৬১০-৭১১)

জাস্টিনিয়ান রাজবংশের শেষ সম্রাট মৌরিসকে ক্ষমতাচ্যুত করে ফ্লাভিয়াস ফোকাস নামে এক অখ্যাত ব্যক্তি বাইজানটাইন সাম্রাজ্যে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিলো। তবে সে বেশি দিন টিকতে পারেনি। হেরাক্লিয়াস নামে এক জেনারেল তাকে সরিয়ে এ সাম্রাজ্যে হেরাক্লিয়ান রাজবংশের উদ্ভব ঘটায়।

একশো বছরের এ রাজবংশের শাসনকালের পুরোটা সময় টালমাটাল ছিল। এ সময়ে বৃহৎ দুটি যুদ্ধ চলমান ছিলো ও আরেকটি দীর্ঘকালীন যুদ্ধ্বের সূচনা ঘটে। চলমান যুদ্ধ দুটি হলো রোমক-পারস্য যুদ্ধএভার-বাইজানটাইন যুদ্ধ।

রোমক-পার্থিয়া যুদ্ধের ইতিহাস অনেক পুরনো। ৫৪ খ্রিস্টপূর্ব হতে ৬২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় পৌনে সাতশো বছরে পার্থিয়ানদের সাথে পৌনে তিনশো ও ঐ অঞ্চলের পরবর্তী সাম্রাজ্য সাসানিয় সাম্রাজ্যের (২২৪-৬৫১) সাথে আরো চারশো বছরের অধিক সময় রোমকদের যুদ্ধ লেগে ছিল। এ সব যুদ্ধসমূহ একত্রে রোমক-পারস্য যুদ্ধ নামে পরিচিত। হেরাক্লিয়াসের সময়কালে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে।

সপ্তম শতকের মধ্য ভাগ থেকে বাইজানটাইনের উত্তরে ও দানিয়ুব নদীর দক্ষিণে বলকান অঞ্চলে বসবাসকারী এভার জাতির সাথে বাইজানটাইনদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ সকল যুদ্ধ বিগ্রহ এভার-বাইজানটাইন যুদ্ধ (৫৬৮-৬২৬) নামে পরিচিত। নবম শতকের মাঝামাঝিতে এভারদের ঐ অঞ্চলে বুলগার নামে আরেক জাতি বুলগেরিয় সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। এর পর থেকে ১২ শতক পর্যন্ত বাইজানটাইনদের সাথে এ বুলগেরিয় সাম্রাজ্যের দ্বন্দ্ব লেগে ছিলো।

সে সময়ে দ্বিতীয় যে যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটেছিলো সেটা হলো মুসলমানদের সাথে বাইজানটাইনদের যুদ্ধ। চারশো বছরের (৬২৯-১০৫০) অধিক সময়কাল ধরে চলমান এ যুদ্ধের নাম আরব-বাইজানটাইন যুদ্ধ। এ সময়কালে সিরিয়া থেকে উত্তর আফ্রিকা হয়ে স্পেন পর্যন্ত মুসলমানদের দখলে চলে আসে।

হেরাক্লিয়াসের পরে এ রাজবংশে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন শাসকের নাম পাওয়া যায় না। ফলে এ রাজবংশের শেষ শাসক দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ানের সময়কালে এ সাম্রাজ্য উত্তাল হয়ে ওঠে। একের পর এক সম্রাট রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় বসে। এ সময়টি বিশ বছরের নৈরাজ্য (৬৯৫-৭১৭) নামে পরিচিত।

ইসাওরিয়ান রাজবংশ (৭১৭-৮০২)

বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের এ নৈরাজ্যের অবসান ঘটায় তৃতীয় লিও। সে সফল ভাবে উমাইয়া সাম্রাজ্যের দখল থেকে নিজের সাম্রাজ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছিলো। তাঁর বিখ্যাত আরেকটি কাজ হলো, লিও আইন করে বাইজানটাইনের খ্রিস্টধর্মালম্বীদেরকে যীশু বা তাঁর মা মেরির মূর্তি বা ছবি পূজা হতে সরিয়ে আনে। ইতিহাসে এ আন্দোলন আইকোনোক্লাজম (iconoclasm) নামে পরিচিত। লিও মূলত ইসলাম ধর্মের মূর্তিপূজা বিরোধী মনোভাবের প্রভাবে এ আন্দোলনের সূত্রপাত করেছে বলে ধারণা করা হয়। এ সময় আইকোনোক্লাজম সমর্থকরা যীশু বা তাঁর মা মেরির মূর্তি বা ছবির সামনে প্রার্থনা করতো এমন অনেক খ্রিস্টানদেরকে হত্যা করে। এরই সূত্র ধরে আরো বেশ কিছু ধর্মীয় পার্থক্য ও রাজনৈতিক মতানৈক্যের কারণে আরো দুশো বছর পরে খ্রিস্টধর্ম রোমান ক্যাথলিক ও ইস্টার্ন অর্থোডক্স নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একে ‘মহাবিভেদ’ (Great Schism, ১০৫৪) বলে।

নিকেফোরিয়ান রাজবংশ (৮০২-৮১৩)

ইসাওরিয়ান রাজবংশের পরে মাত্র ১১ বছরের জন্য প্রথম নিকেফোরাস বাইজানটাইনের ক্ষমতায় নতুন একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। এর নাম নিকেফোরিয়ান রাজবংশ। ৮১১ সালে বুলগেরিয়ার সাথে প্লিক্সার যুদ্ধে সে মারা যায়। এ বংশের শেষ সম্রাট ছিলো প্রথম মাইকেল। তাকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে জেনারেল পঞ্চম লিও। মাত্র সাত বছরের মাথায় আরেক সেনা ক্যু-এর মাধ্যমে বাইজানটাইন সম্রাট হয় দ্বিতীয় মাইকেল। সে প্রতিষ্ঠা করে নতুন রাজবংশ।

আমোরিয়ান রাজবংশ (৮২০-৮৬৭)

মাইকেলের রাজত্বকালে মুসলমানেরা বাইজানটাইনদের কাছ থেকে গ্রিসের ক্রিট ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ দখল করে। এছাড়া এ রাজবংশের তিন সম্রাটের তেমন বিশেষ কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নেই।

মেসিডোনিয়ান রাজবংশ (৮৬৭-১০৫৭)

আমোরয়িান রাজবংশের শেষ সম্রাট তৃতীয় মাইকেলের আত্মীয় ও রাজকর্মচারী প্রথম বাসিল মাইকেলের মুত্যুর পরে এ সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়। সে প্রতিষ্ঠা করে প্রায় দু’শো বছরের মেসিডোনিয়ান রাজবংশ। এ রাজবংশের আমলে শেষ বারের মতো বাইজানটাইন সভ্যতার কিছুটা ‍পুনরুত্থান ঘটে। তবে এ রাজত্বকালের পুরো সময়টা জুড়ে তাদেরকে মুসলমানদের রাজ্য দখল সামলানোর কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়েছে।  এ রাজবংশের নবম সম্রাট দ্বিতীয় বাসিল বুলগেরিয়া সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছিলো। তাঁর হাতে প্রথম বুলগেরিয়া সাম্রাজ্যের পতন ঘটৈছিলো। সে ‘বুলগার ঘাতক’ নামে পরিচিত ছিলো।

নবম শতকের শেষ ভাগে কৃষ্ণ সাগরের উত্তরে অনেকগুলো যাযাবর জাতি মিলে রুরিক রাজবংশের নেতৃত্বে কিয়েভান রুশ (৮৭৯-১২৪০) নামে একটি সংযুক্ত রাজ্য গড়ে তোলে। বর্তমান রাশিয়ানরা এই রাজবংশে জন্মলাভ করেছে। ৯৮০ সালে মহান ভেলাদিমির কিয়েভান রুশের শাসক হয়। তার নেতৃত্বে বিবাহ ও বাণিজ্যের মাধ্যমে বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের সাথে কিয়েভান রুশের গভীর সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও মোঙ্গলদের আক্রমণে তের শতকের মাঝামাঝিতে কিয়েভান রুশের পতন ঘটে। মেসিডোনিয়ান রাজবংশের শেষ সম্রাট ষষ্ঠ মাইকেলের রাজ্যভার ত্যাগের মাধ্যমে এ রাজবংশের পতন হয়।

কিয়েভান-রুশ

এর পরে মাত্র ২২ বছরের মধ্যে আরেকটি রাজবংশের উত্থান ও পতন হয়। এ বংশের নাম দৌকাস রাজবংশ (১০৫৯-১০৮১)। এ রাজবংশের সময়ে সেলজুক মুসলিমরা বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের আনাতোলিয়া (বর্তমান তুরস্ক) দখল করে নেয়।

সেলজুক আক্রমণ

বর্তমান তুর্কিদের আদিবাস মধ্য এশিয় অঞ্চলে। দশম শতকের শুরুতে তুর্কি (Turkic) নামের এই যাযাবর যোদ্ধা জাতির একটি অংশ সেলজুক নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া অভিযান শুরু করে। পরে সে ইসলামে (সুন্নী) দীক্ষিত হয়।

প্রথমে ইরাক, সিরিয়া, প্যালেস্টাইন ও ইরানের কিছু অংশ নিয়ে সেলজুক সাম্রাজ্য (১০৩৭-১১৯৪) গড়ে ওঠে। সেলজুকের নাতি তুঘরিল বেগ ও চাঘরাই বেগের হাতে এ সাম্রাজ্যের উত্থান হয়। তুঘরিলের মৃত্যুর পরে চাঘরাই বেগের পুত্র মুহাম্মদ বেগ (বা আল্প আরসালান বেগ) এ সাম্রাজ্যের হাল ধরে।

মুহাম্মদ বেগের শাসনামলে সেলজুকরা মানজিকার্তের যুদ্ধে (১০৭১) আনাতোলিয়া দখল করে নেয়। মানজিকার্তের এ পরাজয় এক দিকে যেমন পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা করে; অন্যদিকে, সেটি পরবর্তীকালে ক্রুসেড নামে দুশো বছরের এক ভয়াবহ যুদ্ধের বীজ বপন করে।  

সেলজুক-সাম্রাজ্য

মুহাম্মদ বেগের পুত্র মালিক শাহেরর শাসনকালে সেলজুক সাম্রাজ্য অর্ধ-পৃথিবী বিস্তৃত ছিলো। এর পরবর্তীতে এই সাম্রাজ্য ভেঙ্গে ছোট বড় বেশ কিছু রাজ্যে (রুম সালতানাত, দামেস্ক আমিরাত, মসুল আমিরাত ইত্যাদি) পরিণত হয়। পরবর্তীতে উসমানি সাম্রাজ্য, খারাজমিয় সাম্রাজ্য ও মোঘল সাম্রাজ্য এই সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি।

কমনেনস রাজবংশ (১০৮১-১১৮৫)

পাঁচ শাসকের শত বছরের এ রাজবংশ ক্রুসেডের ইতিহাসে ঢাকা। বংশের প্রথম শাসক আলেক্সিওসের সময়ে প্রথম ক্রুসেড (১০৯৬-১০৯৯) ও তৃতীয় শাসক ম্যানুয়েলের সময়ে দ্বিতীয় ক্রুসেড (১১৪৭-১১৫০) ঘটেছিলো। মূলত সেলজুকদের কাছে পরাজরে প্রতিশোধ নিতে বাইজানটাইন শাসকরা ধর্মকে ব্যবহার করে পশ্চিমের দেশগুলোকে ক্রুসেডে উৎসাহিত করে। অন্যদিকে, ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা ১০৫৭ সালে বিভক্ত হয়ে যাওয়া ইস্টার্ন অর্থোডক্সির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সে আহবানে সাড়া দেয়।

বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের ক্ষমতায় শেষ রাজবংশ এন্জেলয় রাজবংশ (১১৮৫-১২০৪)। মাত্র বছর বিশেক এ বংশ ক্ষমতায় ছিলো। এ সময়ে তৃতীয় ক্রুসেড (১১৮৯-১১৯২) সংঘটিত হয়। চতুর্থ ক্রুসেডের সময়ে (১২০২-১২০৪) ক্রুসেডাররা বাইজানটাইনের রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপলের পতন ঘটায়। এর ফলে এ সাম্রাজ্য ভেঙে অনেকগুলো ছোট ছোট অংশ যেমন ল্যাটিন সাম্রাজ্য, নাইসিয়া সাম্রাজ্য, এপিরাস ডেসপোতেইট, ত্রেবিজন্দ সাম্রাজ্য, থেসালোনিকা রাজ্য ইত্যাদির উদ্ভব ঘটে।

বাইজানটাইন-সাম্রাজ্য-১২০৪

অন্যদিকে, রুম সালতানাতের (১০৭৭-১৩০৮) কায়ি (Kayı) গোত্রের নেতা এরতুগ্রুল গাজি ও তাঁর পুত্র উসমানের হাত ধরে তুরস্ক অঞ্চলকে ঘিরে ১২৯৯ সালে গড়ে ওঠে আরেক সাম্রাজ্য- সাতশো বছরের উসমানিয় সাম্রাজ্য। এ সাম্রাজ্যের ৭ম সুলতান দিগ্বিজয়ী সুলতান মেহমুদ ১৪৫৩ সালে কনস্ট্যান্টিনোপল দখল করে নিয়ে অবসান ঘটে  বাইজানটাইন সাম্রাজ্যের।

(ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর গল্প চলবে)

পৃথিবীর গল্প পরম্পরা