কলা ও শিল্প
শিল্পের সাথে ‘কলা’ মিশে কখন ‘শিল্পকলা’ শুরু হয়েছিল তা ঠিক জানা নেই। তবে অন্ততঃ শিল্পকলার দুটি জাগরণের সাথে কলার ব্যাপক সাদৃশ্য লক্ষ্যনীয়। এদের একটির নাম “আর্ট নুভো” আর অন্যটি “আর্ট দেকো”।
শিল্প বিপ্লবের পরবর্তীকাল থেকে শুরু করে উনবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত ইউরোপীয় শিল্প-স্থাপত্যের ডিজাইনে ফুল-লতাপাতার মতো আঁকাবাঁকা ডিজাইনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। এ ধরনের শিল্পের ধরনকে বলা হয় ‘আর্ট নুভো’। এ ধরনের ডিজাইনের সাথে আমাদের আলপনা ডিজাইনের খুব মিল আছে। সে সময়কার দালানকোঠা, চিত্রকলা, আসবাবপত্র প্রভৃতিতে কোনো না কোনো ভাবে ফুল-লতা-পাতা বা এদের মতো গোলাকার, অর্ধ-গোলাকার, আঁকাবাঁকা ডিজাইন খুব চোখে পড়ে। আমাদের গ্রাম-গঞ্জের আসবাবপত্রে এ প্রভাব অনেকদিন টিকে ছিল। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের দামামাতে ধীরে ধীরে এ জাগরণ স্তিমিত হয়ে পড়ে।
এ যুদ্ধের পরবর্তীকালে ইউরোপে, বিশেষ করে ফ্রান্সে অন্য আরেক ধরনের শিল্প আবির্ভূত হয় যা ‘আর্ট দেকো’ নামে পরিচিত। আর্ট নুভোর সাথে আর্ট দেকোর মূল তফাৎ হলো আর্ট দেকোতে সরল রৈখিক, সমান্তরাল ডিজাইনের আধিক্য। একেবারে সাদামাটা, জ্যামিতিক যে সব ডিজাইনকে এখন আমরা আধুনিক বা ইংলিশ ডিজাইন বলি এ গুলো মূলত সবই আর্ট দেকো।
শিল্পের সাথে আছে কলা; আর দোকানে কলার দিকে তাকিয়ে থাকলে দেখা যায়, কিছু কলা বাঁকা আর কিছু সোজা কলা। পাশাপাশি সোজা-বাঁকা কলা দেখলে আর্ট দেকো-আর্ট নুভো শিল্পকলার কথা মনে পড়ে। সোজা-বাঁকা কলাগুলোর মতো এ দুটি শিল্লকলা এখনও টিকে আছে।
দাদা ও শিল্প
বাংলা ‘দাদাগিরি’ শব্দটির যে শৈল্পিক মূল্য আছে তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। দাদাগিরি বা দাদাবাদ নামে রীতিমত একটি শিল্প আন্দোলন আছে।
দাদাবাদ (Dadaism) ছিল ২০ শতকের ইউরোপীয় প্রগতিশীলদের একটি শিল্প আন্দোলন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল একদল শিল্পী যারা পুঁজিবাদী সমাজের যুক্তি, কারণ বা সৌন্দর্যের ধারণা মানতো না তাদের একটি সংঘবদ্ধ শিল্প আন্দোলনের নাম ছিল দাদাবাদ। এ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিল্পীরা মূলতঃ বামপন্থী ছিল। তারা হানাহানি, যুদ্ধ এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করত। এদের শিল্পকর্মে অর্থহীন, উদ্ভট, অযৌক্তিক এবং বুর্জোয়া-বিরোধী প্রতিবাদ প্রকাশ হতো। আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হুগো বল ও মার্সেল ডাচাম।
দাদাবাদের “দাদা” শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে কেউ একমত হতে পারেনি। শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতের একটি হলো, এটি শিশুতোষ ভাষা। বাচ্চা প্রথম যে কয়েকটি শব্দ বলতে শেখে তাদের একটি “দাদা”, যা শিশুসূলভ বালখিল্য, অযৌক্তিকতা বা অসংগতি প্রকাশ করে। যেহেতু দাদাবাদের মূলতত্ত্বই ছিল প্রচলিত নিয়মের ভেঙে অযৌক্তিকতা, অসংগতি প্রকাশ করা তাই একে দাদাবাদ বলা হয়।ইউরোপীয়রা বিশ্বাস করুক বা না করুক, বাংলা ‘দাদাগিরি’ শব্দের সাথে ‘দাদাবাদ’ শিল্প-সাহিত্যের যথেষ্ট মিলবন্ধন আছে। যারা দাদাগিরি করে আর যারা দাদাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী তারা উভয়ই প্রচলিত নিয়মের বিরোধিতা করে, নিয়মের উপর খবরদারী করে, মানতে চায় না।
সম্পর্কিত অন্যান্য ব্লগ