আদ্রে মুনসন

আদ্রে মুনসন- এক ঝলকে জ্বলে নিভে যাওয়া এক নক্ষত্র।

ভূগোলের ভাষায় “মৌসুমি বায়ু” বলে একটি বিষয় আছে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ মৌসুমি বায়ু প্রবাহের দিকও পরিবর্তিত হয়। এই মৌসুমি বায়ুর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মনসুন’ (Monsoon)। এটি মূলত আরবি শব্দ ‘মাওসিম’ (mawsim) থেকে এসেছে।

আদ্রে মুনসন
আদ্রে মুনসন

আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম সুপার মডেলের নাম আদ্রে মুনসন (Audrey Munson)। আদ্রে মুনসনের জীবনের সাথে মৌসুমি বায়ুর একটি মিল আছে। মিলটি হলো মৌসুমী বায়ু যেমন ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করে দিক পরিবর্তন করে, ঠিক তেমনি সময়ের পরিবর্তনের সাথে এই মডেলের জীবনের গতিপথ ভিন্ন দিকে ধাবিত হয়েছিল।

১৮৯১ সালে নিউিইয়র্কে মুনসন জন্মগ্রহণ করে। ছোটবেলা থেকে তাঁর অভিনেত্রী হবার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেবার প্রথম কাজটি করে ফেলিক্স বেনেডিক্ট হারজগ (Felix Benedict Herzog) নামের এক জন আলোকচিত্র শিল্পী। এ শিল্পীর মাধ্যমে শিল্পের জগতে পা রাখে মুনসন।

মুনসনের প্রথম বড় কাজের সুযোগ আসে ইসিডোর কোনতি (Isidore Konti) নামের এক স্থাপত্য শিল্পীর (sculptor) হাত ধরে। এ শিল্পী তাঁকে নগ্ন স্থাপত্য শিল্প নির্মাণে পোজ দিতে রাজী করান। মুনসনকে নিয়ে কোনতির বিখ্যাত সেই নগ্ন স্থাপত্য শিল্পের নাম ছিল “সৌন্দ্য়র্য ত্রয়” (Three Graces)।

এ নামটি বিখ্যাত অন্য আরেকটি নগ্ন স্থাপত্য শিল্প থেকে নেয়া হয় যার স্রষ্টার নাম “এন্তোনিও কানোভা রোম” (Antonio Canova Rome)। সে শিল্পকর্মে যৌবন ও সৌন্দর্যের গ্রিক দেবী “থালিয়া” (Thalia) ও তার দু’জন সহচরী ইউফ্রোসাইনি (Euphrosyne) ও আগলাইয়ার (Aglaia) দেহাবয়বকে চিত্রিত করা হয়। এ শিল্পকর্ম মুনসনকে ব্যাপক খ্যাতি এনে দেয়। ধীরে ধীরে নিউইয়র্কে রাস্তাঘাটে তাঁর এতো বেশি স্থাপত্যকর্ম স্থাপিত হয় যে লোকজন তাঁকে “মিস ম্যানহাটান” (Miss Manhattan) নামে ভূষিত করে।

১৯১৫ সালে মুনসন ‘পানামা-প্যাসিফিক আন্তর্জাতিক এক্সপোজিশন’ এ অংশগ্রহণ করে। সে এ মেলার পাঁচ ভাগের তিন ভাগ শিল্পেরই মডেল ছিলেন। ফলে তাঁকে “পানামা-প্যাসিফিক গার্ল” (Panama-Pacific Girl) নামে অভিহিত করা হয়।

একই বছরে মুনসন চলচিত্রে পা রাখেন। তাঁর অভিনীত প্রথম চলচিত্রের নাম “ইন্সপিরেশন” (Inspiration)। মুনসনই প্রথম আমেরিকান নারী যে চলচিত্রে নগ্ন ভাবে আবির্ভূত হয়।

১৯২১ সাল থেকে মুনসন শিল্পে মডেলের ভূমিকা, গুরুত্ব, যোগ্য সম্মান ও সম্মানীর বিষয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে সে নিয়মিত লেখালেখি শুরু করে। এমনকি সে কয়েকজন নামকরা চলচিত্র পরিচালক-প্রযোজকদের বিরুদ্ধে অপ্রতুল সম্মানী প্রদানের অভিযোগ তুলে রীতিমত সোরগোল বাধিয়ে দেয়।

এ সব ঘটনার কিছু দিনের মধ্যে মুনসন বিভিন্ন কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তাঁর বাড়িওয়ালা তাকে বিয়ে করার জন্য নিজের স্ত্রীকে হত্যা করেছিলো। এর পরে তাঁর থমকে যায় মুনসনের চলার গতি। ১৯২২ সালে সে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিল।

১৯৩১ সালে তাঁকে সেন্ট লরেন্স স্টেট মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৬৫ বছর সেই মানসিক হাসপাতালে কাটিয়ে ১৯৯৬ সালে মারা যায় মুনসন। মৌসুমি বায়ুর মতো এক সময়ে “আমেরিকার ভেনাস” নামে খ্যাত সেই মুনসন এখন কোন এক গোরস্থানে অখ্যাত কবরে পড়ে আছে।

মানুষের জীবনটাই এমন- জীবনের উত্থান ও পতন সবসময় একসূত্রে গ্রথিত থাকে।

সম্পর্কিত অন্যান্য ব্লগ