দানদানকান লড়াই

দানদানকান (Dandanqan) এর ঘটনাকে ইতিহাসে Battle of Dandanqan বলা হয়, War of Dandanqan নয়। বাংলায় Battle ও War দুটোকেই “যুদ্ধ” বলা হলেও দুটো এক নয়। সে জন্য একে ‘দানদানকান লড়াই’ বলা যেতে পারে।

লড়াইটি হয়েছিল ১০৪০ সালে, খোরাসানে (Khurasan)। বর্তমান ইরানের উত্তর- পূর্বাঞ্চল, তুর্কিমেনিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল ও আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল খোরাসান।

৯৭৭ থেকে ১১৮৬ সাল পর্যন্ত খোরাসানের সিংহাসনে ছিল গজনাভী (Ghaznavid) রাজবংশ। এ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সেবুকটিজিন (Sebuktigin)। তিনি ২০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এর পরে শাসন ক্ষমতায় আসেন তাঁর পুত্র মাহমুদ (Mahmud of Ghazni)। বিখ্যাত পারসিক কবি ফেরদৌসি মাহমুদের দরবারে থাকা কালে “শাহনামা” রচনা করেন।

Alauddin Vuian Khorasan map
খোরাসান মানচিত্র

সুলতান মাহমুদ তাঁর শাসনামলে (১০১১ সালে) আরেকটি বিশেষ কাজ করেছিলেন। তিনি বর্তমান মধ্য আফগানিস্তান অঞ্চল ঘুর (Ghur) দখল করেন এবং এখানকার ঘুরি বংশকে (Ghurid dynasty) বৌদ্ধ হতে ইসলাম (সুন্নি) ধর্মে ধর্মান্তরিত করেন।

মাহমুদের যজম পুত্র ছিল- বড়টি মাসুদ (১ম) ও ছোটটি মুহাম্মাদ। ১০৩০ সালে মাহমুদ মারা গেলে যমজের ছোট পুত্র মুহাম্মদ রাজ্য শাসনের হাল ধরেন। শুরু হয় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায়। পাঁচ মাসের মাথায় বড় ভাই মাসুদ (১ম) রাজ্য ছিনিয়ে নেয়। সে মুহাম্মদকে অন্ধ করে দিয়ে কারাগারে বন্দী করে রাখে।

মাসুদের শাসন কালে পাশাপাশি অঞ্চলে -ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও আনাতোলিয়ায় (বর্তমান তুরস্কের অধিকাংশ অঞ্চল) আরেকটি রাজবংশের উত্থান ঘটে। এর নাম সেলজুক (Seljuqs) রাজবংশ। এ রাজবংশের নামকরণ করা হয়েছে সেলজুক বেগের (Seljuq Beg) নামে। তবে এর মূল প্রতিষ্ঠাতা সেলজুকের নাতি তুঘরিল বেগ (Tughril Beg)।

রাজ্যের অভ্যন্তরে যখন কোন্দল শুরু হয়, বহিঃশত্রুরা তখন সুযোগ পেয়ে বসে। গজনাভিদের দূর্বলতার সুযোগে খোরাসানকে নিজেদের দখলে নেয়ার চেষ্টা শুরু করে তুঘরিল বেগ। ১০৩৭-৩৮ সালে গজনাভিদের কয়েকটি শহরও তুঘরিল দখল করে নেয়।

১০৪০ সালে এক দল সেলজুক যাযাবর তুঘরিল ও তাঁর ভাই চাংরির (Chaghri) নেতৃত্বে মাসুদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। মাসুদ এক রকম বাধ্য হয়ে প্রায় ৫০,০০০ সৈন্য নিয়ে লড়াইয়ে নামে। সেলজুকদের দলে সৈন্য কম ছিল, মাত্র ১৬ হাজারের মতো। তবুও এ লড়াইয়ে গাজনাভির পরাজয় ঘটে।

পরাজিত মাসুদ ভারতে পালিয়ে যায়। খোরাসান চলে যায় সেলজুকদের হাতে। এর পরেও আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ও ভারতের উত্তরাঞ্চলে গজনাভি শাসন টিকে ছিল।

১০১১ সালে গজনাভি বংশের হাতে ধর্ম ও রাজ্য হারানো সেই ঘুরি বংশের হাতেই ১১৮৬ সালে গজনাভি বংশের শেষকৃত্য সম্পাদিত হয়।

প্রথম প্রকাশকাল- ২০ মার্চ ২০২০

সম্পর্কিত অন্যান্য ব্লগ