ফেসতা জুনিনা

উৎসবপ্রেমী ব্রাজিলিয়ানদের তিনটি মূল সংস্কৃতি রয়েছে-  মহোৎসব কার্নিভাল, শৈল্পিক আত্মরক্ষা কৌশল কাপোয়েরা আর জাপানি জুডোর ব্রাজিলিয়ান সংস্করণ জু-জুৎসু। এ তিনটির মতো জনপ্রিয় না হলেও ব্রাজিলে আরেকটি সাংস্কৃতিক উৎসব আছে, নাম ফেসতা জুনিনা (Festa Junina) বা জুন উৎসব।

ক্যাথলিক প্রথা হতে উদ্ভূত জুন মাসের এ উৎসবের ইতিহাস সুপ্রাচীন। রোমান প্রাতীচ্য পুরাণের প্রেম ও বিশ্বস্ততার দেবী জুনো ছিলেন শনি বা স্যাটার্নের কন্যা, বৃহস্পতি বা জুপিটারের বোন (পরবর্তীতে স্ত্রী) আর মঙ্গল বা মার্সের মা (সপ্তাহের নামেও পরিবারতন্ত্র!)। এই জুনোর নাম ধরে রোমান-গ্রিকদের মাধ্যমে এ উৎসব একসময় ইউরোপে প্রচলিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৬ শতকে পর্তুগাল উপনিবেশকালে এটি ব্রাজিলে অনুপ্রবেশ করে।

পর্তুগীজদের উপনিবেশের আগে ব্রাজিলের আদিবাসী গোত্ররা স্ব স্ব ধর্মাবলম্বী ছিলেন। অন্যান্য পর্তুগীজ উপনিবেশিক শোষণের মধ্যে অন্যতম ছিল এসকল আদিবাসীদের ধর্মান্তরিত করে ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষাদান। এ ধর্মান্তরকরণ এতটাই প্রকট ছিল যে এখন আর সেসকল আদিবাসীয় ধর্মের লেশমাত্র পাওয়া যায় না। ক্যাথলিক ধর্ম মতে সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্ট (মুসলিম ধর্মমতে হযরত যাকারিয়ার পুত্র ইয়াহিয়া) হলো খ্রিস্টের অগ্রদূত যিনি যীশুখ্রিস্টকে ব্যাপটাইজ করেন। এই সেন্ট জনের জন্ম (২৪ জুন) উৎসব উদযাপনই ফেসতা জুনিনা, যার অন্য নাম festa de São João বা সেন্ট জনের উৎসব।

আমাদের গ্রাম-গঞ্জে বৈশাখ মাসে যে ধরণের মেলা বসে ফেসতা জুনিনায় তেমন ধরণের মেলার আয়োজন করা হয়। এ মেলার নাম কেরমেসেস (quermesses) । এখানে ব্রাজিলিয়ানরা জবড়জঙ পোশাকে (অনেকটা সার্কাসের ভাঁড়ের মত) নাচ-গান করে, বিচিত্র সব গ্রাম্য খাবারের বিকিকিনি করে, জুয়া প্রকৃতির ছোট-খাটো খেলার আয়োজন করে ইত্যাদি ইত্যাদি। এ উৎসবের নৃত্যের নাম কোয়াদ্রিলিয়া (quadrilha) । ফরাসি উদ্ভূত এ নৃত্য অনেকটা আমাদের গীতনাট্যের মতো। এ নৃত্যনাট্যে গল্পের ছলে গ্রাম্যবিবাহ উৎসব চিত্রায়ন করা হয়ে থাকে। এতে নারী-পুরুষেরা খামারীদের মতো সাজপোশাকে নাচ-গান করে।

পুরুষদের পোশাকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো জঙ্ঘাবন্ধনী ও মাথায় খড়ের হ্যাট আর মেয়েরা পরে অশ্বপুচ্ছ স্টাইলের ফ্রক। এ উৎসবের বিশেষ খাবারের নাম কানজিকা (canjica) এবং পানীয়ের নাম কেনতাও (quentão)। কানজিকাকে বাঙলায় পরিচিত করতে একে ভুট্টার পায়েস বলা যেতে পারে। এতে দুধ, চিনি, দারুচিনি ছাড়াও থাকে লবঙ্গ ও নারিকেলের দুধ। কেনতাও হলো এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, কিশমিশ ও রেড ওয়াইন সহযোগে প্রস্তুতকৃত উষ্ণ পানীয় বিশেষ। ফেসতা জুনিনাকে কেন্দ্র করে আরও একটি মজা রয়েছে, যার নাম কোহিও এলিগানতে (correio elegante) বা অভিজাত পত্র। এটি হলো বেনামে চিঠি পাঠিয়ে অন্যকে বিস্মিত করা।

প্রথম প্রকাশকাল- ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সম্পর্কিত অন্যান্য ব্লগ