দেবতা এ্যাটলাস

Bluetooth বা নীলদাঁত

দশম শতকে ডেনমার্ক ও নরওয়ে অঞ্চলে ভাইকিংসসহ বেশ কিছু যাযাবর জাতি বাস করতো। তাদের পরস্পরের মধ্যে ঝামেলা লেগেই ছিলো। তখন এক রাজা বিবদমান জাতিগুলোকে একত্রিত করে ডেনমার্ক ও নরওয়েকে মিলিয়ে এক রাজ্য গড়ে তোলেন। এই রাজার নাম ছিল হ্যারল্ড ব্লুটুথ (Harald Bluetooth)। এ রাজার নাম থেকে bluetooth এর নামকরণ করা হয়।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান (ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন ইত্যাদি) অঞ্চল থেকে ভাইকিংসরা পশ্চিম ইউরোপের জার্মান, ব্রিটেন, ফ্রান্সের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইকিংসরা রুনিস (Runes) ভাষায় কথা বলতো।

ব্লুটুথ প্রতীক
ব্লুটুথ প্রতীক

ব্লুটুথের আবিস্কারক ড. জ্যাপ হার্টসেন; কিন্তু এর নামকরণ করে জিম কারদাচ (Jim Kardach)। করদাচ ১৯৯৭ সালে রাজা হ্যারল্ডের কাহিনী নিয়ে Frans G. Bengtsson-এর লেখা The Long Ships বইটি পড়ে অনুপ্রাণিত হন। ফলে তিনি হার্টসেনের নতুন সংযোগকারী এ নতুন ডিভাইসটির নাম দেন “ব্লুটুথ”।

হ্যারল্ড ব্লুটুথ রুনিস ভাষায় তাঁর স্বাক্ষরে একত্রে H ও B লিখতেন। রুনিক হরফে একত্রে লেখা H ও B এর প্রতীককে একত্রিত করে ব্লুটুথের প্রতীক তৈরি হয়েছে।

রুনিক বর্ণমালা
রুনিক বর্ণমালা

Pandora’s box বা আশার ভাণ্ডার

গ্রিক পুরাণে মহাকাশ পিতা ইউরেনাস ও ধরিত্রি মাতা গায়ার দ্বাদশ টাইটান সন্তান ছিল। এদের ছয় জন ছিল টাইটান (পুরুষ) আর বাকী ছয় জন ছিল টাইটানেস (মহিলা)। একত্রে সবাইকে টাইটান বলে। পুরুষ-মহিলা হিসেবে জোড়ায় জোড়ায় এই টাইটানরা হলো-অকেয়ানোস ও তেথুসহাপেরিয়ন ও থেইয়া, কয়উস ও  ফয়বে,  ক্রোনাস  ও রেয়ানেমোসাইনে ও থেমিসক্রিউস ও ইয়াপেতুস

অকেয়ানেস ও তেথুসের পরিবারে অসংখ্য অশেনাইডস বা জলপরী জন্ম নিয়েছিল। এদের একজন ছিল এশিয়া বা ক্লাইমেন। টাইটান ইয়াপেতুসের ঔরসে এই এশিয়ার গর্ভে জন্ম নেয়া এক সন্তানের নাম প্রমিথিউস

গ্রিক পুরাণ অনুসারে প্রমিথিউস মানুষ সৃষ্টি করেছিল। তাকে মানুষের সবচেয়ে উপকারি বন্ধু বলা হত। প্রমিথিউস মানুষকে আর সব প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠতর করার জন্য তাদের সোজা হয়ে হাটতে শেখালেন এবং অন্যান্য জীব থেকে মানুষকে মহত্তর বলে ঘোষণা দিলেন। মানুষের জন্য সূর্যের কাছ থেকে মশাল জ্বালিয়ে আনেন এবং মানুষকে আগুন উপহার দেন। এতে দেবতা জিউস তার উপরে ভয়ানক ক্ষুদ্ধ হয়েছিলো।

শাস্তি স্বরূপ জিউস প্রমিথিউসকে পাহাড়ের সাথে শৃঙ্খলিত করে রাখেন এবং তার উপর বর্বর অত্যাচার চালান। একটি ঈগল রোজ এসে প্রমিথিউস এর কলিজা খেয়ে যেত আর সেখনে জন্ম নিত নতুন আরেকটি কলিজা। আবার ঈগল এসে খেয়ে গেলে নতুন কলিজা জন্মাতো প্রমিথিউস এর।

দান্তে গ্যাবরিয়েল রোসেটি (১৮৭১)
দান্তে গ্যাবরিয়েল রোসেটি (১৮৭১)

এর পরেও জিউস থামেনি। জিউস পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য দিয়ে গড়ে তোলে পরমা তিলোত্তমা প্যানডোরাকে। প্যানডোরাকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময় দেবতারা একটি বাক্স দিয়ে তা না খোলার জন্য বলে দেয়। কিন্তু নারী জাতি কৌতূহলের দাস। নিজেকে সংবরণ না করে প্যানডোরা খুলে ফেলে বাক্সের ঢাকনা। ঘটে চরম বিপত্তি। একে একে বের হতে থাকে দুঃখ-যন্ত্রণা, রোগ-শোকসহ পৃথিবীর যাবতীয় অশান্তি। ভয় পেয়ে প্যানডোরা বন্ধ করে বাক্সটি। সেখানে শুধু অবশিষ্ট থাকে ‘আশা’। এজন্যই মানুষ চরম দুঃখের মাঝেও আশায় বুক বাঁধে।

Atlas বা মানচিত্রাবলী

প্রমিথিউসের ভাইয়ের নাম এ্যাটলাস। বিশ্বকে ঘাড়ে করে দড়িয়ে থাকা যে মূর্তিটি আমরা দেখি সেটি আসলে প্রমিথিউসের ভাই এ্যাটলাসের মূর্তি।

গ্রিক পুরাণে বারো জন টাইটান এবং এদের সন্তানদের মাধ্যমে বারো দেবতার আবির্ভার ঘটে। এদেরকে বলে দ্বাদশ অলিম্পিয়ান দেবতা গ্রিক পুরাণে টাইটানদের থেকে এদের প্রভাব অনেক বেশি। এরা হলো জিউসহেরাপোসেইডনদেমেতেরএথেনাএ্যাপোলোআর্তেমিসআরেসআফ্রোদিতিহেফাইসতসহার্মিস এবং ডায়োনিসাস

দেবতা এ্যাটলাস
দেবতা এ্যাটলাস

এই টাইটানদের সাথে অলিম্পিয়ান দেবতাদের যুদ্ধ হয়েছিল। এ যুদ্ধে এ্যাটলাস ও তার আরেক ভাই মেনোতিয়াস টাইটানদের পক্ষে যুদ্ধ করে। অলিম্পিয়ানরা যুদ্ধে জয়লাভ করলে অধিকাংশ টাইটানদেরকে জিউস ভূগর্ভে তারতারাস নামে এক গভীর খাঁদে আটকে রাখে। এ্যাটলাসকে জিউস এক ভিন্ন ধরনের শাস্তি দিয়েছিল। তার কাজ ছিল স্বর্গকে কাঁধে করে ধরে রাখা। এ জন্য আমরা সবসময় এ্যাটলাস টাইটানের এই শিল্পকর্মটি দেখতে পাই।

জেরারদাস মেরকাতর
জেরারদাস মেরকাতর

ডাচ ভূগোলবিদ জেরারদাস মেরকাতর ষোড়শ শতকে তার মানচিত্র সংকলন প্রকাশের সময় টাইটান এ্যাটলাসে নামকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এ সংকলনের নাম দেন এ্যাটলাস। এর পর থেকে এ্যাটলাস বলতে মানচিত্রের সংকলনকে বোঝায়।

আটলান্টিক মহাসাগর নামের সাথেও টাইটান এ্যাটলাসের সম্পর্ক রয়েছে। ‘আটলান্টিক ওশান’ অর্থ ‘এ্যাটলাসের সাগর’।

FUCK রহস্য

“ন্যাটো” (NATO) শব্দটির সাথে আমরা অনেকে পরিচিত। পড়ার সময় এই চারটি অক্ষর একত্রে একটি শব্দের মতো উচ্চারিত হলে প্রতিটি অক্ষর আলাদা একটি শব্দ নির্দেশ করে। যেমন, North Atlantic Treaty Organization। “ন্যাটো”র মতো শব্দকে বলে এক্রোনিম (acronym)। এ রকম আরেকটি এক্রোনিম শব্দ “রাডার” ( Radio Detection And Ranging)।

অনেকে ইংরেজিতে বহুল প্রচলিত FUCK অপশব্দটিকে এক্রোনিম হিসেবে বিবেচনা করে। মধ্য যুগের কোন এক সময়ে ইউরোপের কোন এক রাজা নাকি বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের বিরুদ্ধে আইন জারী করে। তাই ঐ সময়ে এ ধরনের সম্পর্কের আগে রাজার অনুমতি নিতে হতো। এ অনুমতি ছিল- Fornication (বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক) Under Consent/ Command of King বা Fornication Under Christ, King যার সংক্ষিপ্ত রূপ FUCK। সে সময়ে নাকি অনুমতি প্রাপ্তদের এই সংক্ষিপ্ত শব্দটি দরজায় লাগানো হতো।

কেউ কেউ আবার মনে করে FUCK শব্দটি For Unlawful Carnal Knowledge এর একটি এক্রোনিম। তবে উপরের কোন তত্ত্ব টেকেনি কারন এ শব্দটি কোন এক্রোনিম নয়।

তাহলে শব্দটি কিভাবে ইংলিশে এল? অনেকের ধারনা, এ শব্দের সাথে ডাচ fokken (জন্ম দেয়া), জার্মান ficken (দ্রুত সঞ্চালন করা), নরওয়ের fukka (সঙ্গম করা) বা সুইডিশ focka (সঙ্গম করা) শব্দ থেকে fuck শব্দটি ইংরেজিতে ঢুকে পড়েছে।

লেখ্য ইংলিশে এ শব্দটি এতটা অগ্রহণযোগ্য ছিল যে, ১৭৫৫ সালে স্যামুয়েল জনসন প্রকাশিত ইংরেজির প্রথম অভিধান A Dictionary of the English Language এর প্রথম সংস্করণে শব্দটি রাখা হয়নি। এমনকি Oxford English Dictionary এর প্রথম এডিশনেও এ শব্দ ছিল না। কালক্রমে শব্দটি অভিধানভূক্ত হয়।

Groggy বা মাতাল

Groggy (গ্রগি) শব্দটির অর্থ “মাতাল”। এ শব্দটির উৎপত্তির পেছনে ভেরনন নামক এক বৃটিশ এডমিরালের অবদান আছে।

ভেরনন সিল্ক ও উলের মিশ্রণে জলরোধী এক ধরণের আলখেল্লা পরিধান করতো যা ‘গ্রোগ্রাম’ (grogram) নামে পরিচিত ছিলো। সে জন্য নাবিকেরা তাঁকে ‘ওল্ড গ্রগ’ (Old Grog) বলে ডাকতো।

১৭৪০ সালে ভেরনন তাঁর জাহাজের নাবিকদের জন্য এক নিয়ম চালু করলো। নিয়মটি হলো তাঁর নাবিকদেরকে পানের জন্য নির্ভেজাল রাম (এ প্রকারের মদ, rum) সরবরাহ না করে পানি মিশিয়ে পরিবেশন করা হবে। ভেরননের ডাকনাম ‘ওল্ড গ্রগ’ এর সাথে মিল রেখে পানি মেশানো রামকে বলা হতো ‘গ্রগ’ (grog)। ঐ গ্রগ খেয়ে যারা মাতলামি করতো তাদেরকে বলা হতো গ্রগি।

(ধারাবাহিকভাবে শব্দরহস্যভেদ চলবে)