ইদ মোবারক

সেই ঈদ, এই ইদ।

মনে পরে। সেইসব চাঁদ রাতে একটা বড় প্রতিযোগিতা ছিল। ঈদ মোবারক প্রতিযোগিতা।

হার্ডপেপারে নকল করে লিখতাম “ঈদ মোবারক”। মোটা কালিতে। গোটা গোটা অক্ষরে। কোণা-কাঁনচিতে বাঁকা চাঁদ বা মিনারের ছবি আঁকতাম। সস্তা দামের নানান রঙের চিকন চিকন মার্কার দিয়ে অক্ষরের বর্ডার দিতাম। সবুজ বা লাল বর্ডার।

পরের কাজ ছিলো অক্ষরগুলো রঙ করা। মোমের রঙ বা কৌটার রঙ। অক্ষরের উপরে তিন টাকা দামের আঠা লাগাতাম। তার উপর সাত টাকার কুচি কুচি জরি বসাতাম। এবার শুকানোর অপেক্ষা।

এরপর সেই “ঈদ মোবারক” ঘরের দরজার বাতার উপরে লাগাতাম। কখনো আঠা দিয়ে, কখনো বা পেরেক।

সাথে থাকতো রঙিন কাগজের কয়েকটা শিকল। লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, কমলা রঙের কাগজ। দু’চারটা পাশ দিয়ে ঝুলতো। একটা লেখার উপর দিয়ে একেঁবেঁকে লাগানো থাকতো। সাথে অনেক চিকন চিকন করে কাটা সিলিফনের কাগজকুচি পাটের সুতায় আঠা দিয়ে লাগানো জরির মালাও যোগ করতো। শেকলমালাগুলো নিচু করে লাগানো থাকতো। কেউ ঘরে ঢুকলে সেগুলো মাথা স্পর্শ করতো।

চমক দেবার জন্য সবাই সবার “ঈদ মোবারক” শেষে লাগাতো। অনেক মাঝরাতে, কেউবা সকালে ঝোলাতো।

ঈদের সকাল পার হলে এটার আর গুরুত্ব থাকতো না। দুপুর-বিকালের মধ্যে “ঈদ মোবারক” ত্যাঁড়া-ব্যাঁকা হয়ে যেত। শেকলমালাগুলো ছিঁড়ে যেত। খুলে পড়তো। কখনো কখনো দক্ষিণের ঝড়ো বাতাসে উড়ে যেত।

সেই সব ”ঈদ মোবারক” ঝড়ো বাতাসে উড়ে গেছে। নতুন ‘ইদ মোবারক’ এসেছে।

মেয়েটা ব্রাজিল-কানাডাতে বড় হয়েছে। এসবের কিছুই সে দেখেনি। বোঝে না, বোঝানোও যায় না। তাই আমার ঈদযাপন তাকে আজ কাগজে এঁকে এঁকে বোঝাবো। তাই স্মৃতিটা একটু ঝালাই করে নিলাম।

তবে যাবার আগে… সবাইকে নকল করে শক্ত কাগজে আঁকা, রঙ করা, আঠা লাগানো, জরি বসানো, শেকলমালা ঝুলানো, দমকা হাওয়ায় কোণা উল্টানো সেই পুরাতন “ঈদ মোবারক”।