পিথাগোরাস-এর ‘দশের টেট্রাকটিস’
পিথাগোরাস বিশ্বাস করতেন যে, সংখ্যা বাস্তবিকতার পরম শক্তি (ultimate nature of reality is number) । এ তত্ত্বের ভিত্তিতে তিনি তাঁর ‘দশের টেট্রাকটিস’ (tetractys of the decad) তৈরী করেন। টেট্রাকটিস (tetractys) গ্রিক শব্দ, যার অর্থ চার। এটি ত্রিভূজাকৃতির এমন একটি ডায়াগ্রাম যেখানে চারটি সারিতে ১, ২, ৩ ও ৪-টি করে বিন্দু রয়েছে, যাদের যোগফল ১০।
টেট্রাকটিসের চারটি সংখ্যা চারটি বিষয় নির্দেশ করে। এখানে ১ (এক)-কে বলে ‘ইউনিটি (Unity)- ঐক্য, একত্ব, অখন্ডতা। ২ (দুই) হলো ‘ডাইয়াড’ (Dyad)। এটি স্রষ্টা ও সৃষ্টি বা সৃষ্টি ও ধ্বংসকে বোঝায়। ৩ (তিন)-এর নাম ‘হারমোনি’ (harmony)।
৩-এর অর্থ নিয়ে কয়েকটি ব্যাখ্যা আছে- (এক) ত্রয়ী শক্তি (trinity)। এখানে আছে স্রষ্টা, সৃষ্টি ও পৃথিবীর সকল জীবের আত্মাসমূহ (world soul); (দুই) খ্রিস্টধর্মের ত্রয়ী শক্তি– ঈশ্বর (পিতা), যিশু (পুত্র) ও পবিত্র আত্মা (the holy spirit)। পিথাগোরাসের এ টেট্রাকটিসের প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পরে যিশু খ্রিস্টের জন্ম হয়। তাই ধারণা করা হয় যে, খ্রিস্টধর্মের ত্রয়ী শক্তি তত্ত্বে পিথাগোরাসের প্রভাব থাকতে পারে। (তিন)- ত্রিমূর্তি বা ত্রিরূপ- সৃষ্টি (ব্রহ্মা), লালন (বিষ্ণু) ও ধ্বংস (শিব)। এ ধারণার সাথে সনাতন ধর্মের ত্রি-ভগবান তত্ত্বের মিল রয়েছে। সনাতন ধর্মের উদ্ভব পিথাগোরাসের জন্মের প্রায় হাজার খানেক বছর আগে। এমন হতে পারে যে পিথাগোরাস সনাতন ধর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন।
(চার) জানুস (Janus)। জানুস হলো মানুষের চেতনার তিনটি স্তরের সমন্বয়- চেতন, অবচেতন ও অচেতন। জানুস নামে রোমানদের এক দেবতা ছিল। তিনি ছিলেন প্রারম্ভ (beginnings) ও ত্রান্তির (transitions) দেবতা। দ্বিমুখী এ দেবতা অতীত ও ভবিষ্যৎ দেখতে পেত। রোমান এ দেবতার নাম থেকে ইংরেজি পঞ্জিকার ‘জানুয়ারি’ শব্দটি প্রচলিত হয়েছে।
(পাঁচ) ত্রি-পৃথিবী- স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল। এ ধারণার সাথে গ্রিকদের তিনটি প্রধান দেবতার মিল রয়েছে- স্বর্গের দেবতা জিউস (Zeus), সমুদ্র দেবতা পোসাইডন (Poseidon) ও পাতালের দেবতা হেডিস (Hades)।
৪ (চার) হলো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড/মহাবিশ্ব (kosmos/cosmos)। এছাড়া ৪ মহাবিশ্বের মূল চারটি উপাদান নির্দেশ করতে পারে- মাটি, পানি, বায়ু ও আগুন।
অন্য আরেক ব্যাখ্যায় ১ থেকে ৪ হল- ১ হলো বিন্দু (point), ২ রেখা (line), ৩ ক্ষেত্র/ভূতল (surface) এবং ৪ ঘণবস্তু (solid)।
সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিতে পিথাগোরাস সঙ্গীত তত্ত্বও (theory of music) উদ্ধাবন করেছিলেন। এ তত্ত্বে তিনি দেখিয়েছেন যে, বাদ্যযন্ত্রে সুরের মধ্যবর্তী বিরতিগুলি প্রথম চারটি পূর্ণসংখ্যার মধ্যে অনুপাত হিসাবে প্রকাশ করা যেতে পারে।
জ্যামিতিতে সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি বাহু সম্পর্কিত পিথাগোরাস উপপাদ্যও রয়েছে।