ফরাসি বিপ্লব-জুলাই বিপ্লব-ফেব্রুয়ারি বিপ্লব

পশ্চিমা গণতন্ত্রের ইতিহাসে ফরাসিতে পর পর তিনটি বিপ্লব ঘটে-ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯), জুলাই বিপ্লব (১৮৩০) ও ফেব্রুয়ারি বিপ্লব (১৮৪৮)। ফরাসি বিপ্লব দিয়ে এই তিন বিপ্লবের পরম্পরা শুরু হয়। এ বিপ্লবে মাধ্যমে পশ্চিমা সভ্যতার ফ্রান্স রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্র পথে চলতে শুরু করে।

১৭৮৯ সালে ফরাসিতে যে বিপ্লব দেখা যায়, তা কোনো আকস্মিক কারণে ঘটেনি। পঞ্চদশ লুইয়ের অষ্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধে (১৭৪০-৪৮) এবং সপ্তবর্ষের যুদ্ধে (১৭৫৬-৬৩) পরাজয়, ১৭৭৫ সালে ফরাসির দূর্ভিক্ষ ও এর পরে মার্কিন স্বাধীনতা যুদ্ধে (১৭৭৫-৮৩) ফরাসিদের বিপুল ব্যয়ের কারণে ফ্রান্সে অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। এ মন্দাকালে ফ্রান্সে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, বেকারত্বের উচ্চহার, খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য, সমাজের বুর্জোয়া শ্রেণির লোকদের অবারিত সুযোগ-সুবিধা, যাজকশ্রেণীর ভোগ-বিলাস সব কিছুই লাগামহীন হয়ে পড়ে। রাজা ষোড়শ লুই (১৬তম লুই, লুই-অগাস্তে দে ফ্রান্স) কোন কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।

একদিকে যেমন সমাজের বঞ্চিত “থার্ড স্টেট” বা সাধারন মানুষেরা ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে কোনরূপ সাহায্য পচ্ছিল না, অন্যদিকে দিনে দিনে তাদের উপর বাড়ছিল করের বোঝা। সে সময়ে ফ্রান্সের ৯৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ছিল মাত্র ৫ ভাগ মানুষ। অথচ সেই ৫ ভাগ মানুষই কোন আয়কর দিত না। যারা আয়কর দিত তারা আবার তেমন কোন সুবিধা ভোগ করতো না। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করত তাদেরকে বাস্তিল দুর্গে বন্দী করে নির্যাতন করা হত। ফলে স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতন ও জুলুমের প্রতীক হয়ে উঠেছিল বাস্তিল দুর্গ। তাই ১৪ জুলাই ১৭৮৯ তারিখে বাস্তিল বিক্ষোভের মাধ্যমে এ বিপ্লব শুরু হয়। বিপ্লবের মূলনীতি ছিল “স্বাধীনতা, সমতা, ভ্রাতৃত্ব, অথবা মৃত্যু” (Liberté, égalité, fraternité, ou la mort!”)। 

ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯)