বার্থোলোমেউ দিবস হত্যাযজ্ঞ

যিশু খ্রিস্টের বারো জন শিষ্যে একজন বার্থোলোমেউ (Bartholomew)। ইউরোপে খ্রিস্টানরা ২৪ আগস্টে বার্থোলোমেউ দিবস পালন করতো।

১৫১৭ সালে খ্রিস্টান ধর্ম দুই ভাগ- ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট এ বিভক্ত হয়ে যায়। এ বিভাজনে নেতৃত্ব দিয়েছিল জার্মানির মার্টিন লুথার। ইউরোপের ইতিহাসে এ সময়টাকে ‘সংস্কারকাল’ (Reformation) বলা হয়। ঐ বিভেদের ফলে খ্রিস্টানদের দুই শাখার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সমগ্র ইউরোপে বিশেষ করে জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ইতালিতে এ দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৬শ শতকের শেষ ভাগ (১৫৬২-৯৮) জুড়ে ফ্রান্সে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্টদের একাংশ (হুগেনট (Huguenots) নামে পরিচিত ক্যালভিনিস্ট প্রোটেস্ট্যান্ট) এর সাথে দ্বন্দ্ব চলেছিল। ইতিহাসে একে ‘ফরাসি ধর্মযুদ্ধ’ বলে।

ফ্রান্সের সেন্ট বার্থোলোমেউ দিবসের হত্যাযজ্ঞ মূলত ঐ দ্বন্দ্বের এক ভয়াল পরিণতি। তবে ধর্মের পাশাপাশি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে আরেকটি বিষয় জড়িয়ে আছে। তা হলো ফ্রান্সের দুই শক্তিশালী পরিবারের অভ্যন্তরীণ কলহ। এ পরিবার দুটির নাম মেডিসি (Medici) ও বৌর্বনদের (Bourbon)।  

ফান্সের ক্ষমতায় তখন মেডিসি পরিবারের ক্যাথলিক ধর্মালম্বী রাজা ৯ম চার্লস। সেখানে হুগেনটরা রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন এডমিরাল গ্যাসপার্ড দে কলিগনি (Gaspard de Coligny) ।

এ সময়ে ঘটলো এক অঘটন। চার্লসের বোন মার্গারেট প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মালম্বী বৌর্বন বংশোদ্ভূত নাভারের (Navarre) ৩য় রাজাকে বিয়ে করলো। নাভারের এই রাজাই পরবর্তীতে চতুর্থ হেনরি নামে ফ্রান্সের সিংহাসনে বসেন।

এই বিয়ের কারনে মেডিসি ও বৌর্বন পরিবারের দ্বন্দ্ব চরমে উঠলো। ক্রোধে উন্মত্ত চার্লস বিয়ের কয়েক দিন পরে হুগেনটদের হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাঁর নির্দেশে সেন্ট বার্থোলোমেউ দিবস পালনের প্রাক্কালে ক্যাথলিকরা হুগেনটদেরকে হত্যা শুরু করে। সারা ফ্রান্স জুড়ে কয়েক সপ্তাহ ব্যাপী চলা এ হত্যাকাণ্ডে প্রায় ৩০,০০০ মানুষ মারা যায়। এ হত্যার ফলে ফ্রান্সে প্রোটেস্ট্যান্টদের প্রভাব কমে যায়।

সেন্ট বার্থোলোমেউ দিবসের প্রাক্কালে এই হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল বলে একে সেন্ট বার্থোলোমেউ দিবসের হত্যাযজ্ঞ (St. Bartholomew’s Day massacre) বলে।

কোন দেশের কোন ইতিহাসে ধর্ম কতো মানুষকে বাঁচিয়েছে তার কোন তালিকা হয়তো পাওয়া যাবে না। তবে ধর্মের নামে ক্রুসেড, জিহাদ, ইহুদিবাদী আন্দোলন প্রভৃতিতে কত শত, লক্ষ মানুষের বলীদান হয়েছে তা সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যায়। এ সব যুদ্ধ কখনো মানব সভ্যতার কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনি, পারবেও না।

প্রথম প্রকাশকাল- ২২ মার্চ ২০২০

সম্পর্কিত অন্যান্য ব্লগ