আজ কৃষ্ণজন্মাষ্টমী। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন।

কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ ঠিক কবে, কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেন সে বিষয়ে কোন ঐতিহাসিক দলিল পাওয়া যায় না।

সম্পদ দাশের “বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ”, শ্রীমৎ ভক্তিচারু স্বামী অনূদিত “লীলা-পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ”, বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের “কৃষ্ণচরিত্র”, ডঃ দীপক চন্দ্র সম্পাদিত “হরিবংশ”, ‘মহাভারত’, ‘ভাগবতপুরাণ’, ‘বিষ্ণুপুরাণ’ কোনটাই এ তথ্য দিতে পারেনি।

তবে হিন্দু পঞ্জিকার হিসেব অনুযায়ী, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে (মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বর) যখন রোহিণী নক্ষত্রের (আকাশের ১৪তম উজ্জ্বল প্রভার নক্ষত্র) প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। জ্যোতিষশাস্ত্র ও লোকবিশ্বাস বলে, কৃষ্ণ সম্ভবত ৩২২৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ১৮ অথবা ২১ আগস্ট বুধবার গ্রহণ করেছিলেন।

আমার মতে, শ্রীকৃষ্ণ ব্যক্তি থেকে চরিত্র হিসেবে অনেক বড়ো, দর্শন হিসেবে আরও অনেক বড়। বিশেষ করে, শ্রীমদ্ভগবদগীতায় তাঁর প্রণীত দর্শনে আমি মুগ্ধ।

প্রতিটি ধর্মে কিছু আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি থাকে। আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি কালক্রমে পরিবর্তিত হতে থাকে, হতে থাকবে। সেইসব রীতিনীতি দিয়ে ধর্মকে বিচার করা ঠিক নয়। ধর্মের মূল বিষয় ধর্মতত্ত্ব। ধর্মের তত্ত্ব ভুলে ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি ধরে পড়ে থাকলে পদে পদে ধর্ম বিতর্কিত হবে। তাইতো হচ্ছে।

আজকাল শ্রীকৃষ্ণের নাম শুনলেই সবার মনে বাঁশি, বৃন্দাবন, রাধা ও ১৬১০৮ স্ত্রীর কথা ভেসে ওঠে। কৃষ্ণ প্রতিমূর্তির এ ক্ষতি করেছে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্য- ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’, ‘গীতগোবিন্দ’, ‘বৈষ্ণব পদাবলী’ ইত্যাদি।

এ প্রভাব ইসলামী সাহিত্যেও আছে, বিশেষ করে পুঁথি ও মর্সিয়া সাহিত্যে। আহমদ ছফার ‘বাঙালী মুসলমানের মন’ প্রবন্ধে এ বিষয়ে দারুণ আলোচনা আছে।

সে যাই হোক। আসল কথা হলো, কৃষ্ণের ১৬১০০ প্রেয়সী/ স্ত্রীর গল্প শুধু পুরাণের একটি অংশে সীমাবদ্ধ ৷ নরকাসুর নামক অসুরের কারাগার থেকে তিনি তাদেরকে উদ্ধার করেন, হয়তো সম্মান রক্ষার্থে তাদেরকে স্ত্রীর মর্যাদাও দিয়েছিলেন।

আর রাধা শ্রীকৃষ্ণের পরম সত্ত্বা, ‘নাদশক্তি’ বা শাশ্বত সঙ্গী বা দিব্যলীলার শক্তি। এজন্য রাধা ও কৃষ্ণের যুগলমূর্তিকে ‘রাধাকৃষ্ণ’ নামে আরাধনা করা হয়।

শ্রীকৃষ্ণের স্বীকৃত স্ত্রীর সংখ্যা ৮ জন। এরা ‘অষ্টভার্যা’ নামেও পরিচিত। এরা হলেন- রুক্মিণী, সত্যভামা, জাম্ববতী, কালিন্দি, মিত্রবৃন্দা, নগ্নাজিতি, ভদ্রা এবং লক্ষণা। তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর ১০টি পুত্র ও একটি কন্যা ছিল। সব মিলিয়ে সন্তানের সংখ্যা ৮৮ জন।

সাহিত্যের শ্রীকৃষ্ণ আর বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণ প্রায় ভিন্নধর্মী দুটি সত্ত্বা। একটির সাথে আরেকটিকে মিলিয়ে বা গুলিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। সাহিত্য ও ধর্ম দুটো দুটোর স্থানে থাকুক। শুধু কর্মে, প্রেরণায়, দর্শনে চির জাগরুক থাকুক শ্রীকৃষ্ণ।

শুভ জন্মাষ্টমী।