raphael madonna-and-child-1505

এ পোস্টের চারটি চিত্রকর্মের দিকে লক্ষ্য করুন। সবগুলোর চিত্রের বিষয়বস্তু এক- মা ম্যাডোনা বা মেরির কোলে শিশু যিশু। তবে চারটি শিল্পকর্মের তিনটিতে নারী ও শিশুর চিত্র মোটামুটি একই ধরনের হলেও একটি বেশ ভিন্ন। এটা মূলত বিষয়বস্তু, ভাবধারা ও সময়ের পার্থক্য।

নাদুস-নুদুস শিশু ও আবেদনময়ী মায়ের চিত্রটি বিখ্যাত চিত্রকর রাফায়েলের আঁকা। ১৫০৫ সালে চিত্রিত এ শিল্প একটি রেনেসাঁ চিত্রকর্ম। বাকী তিনটি রেনেসাঁ পূর্ববর্তী মধ্যযুগীয় শিল্পকর্ম।   

মধ্যযুগের শিল্পকর্ম ধর্মভিত্তিক ছিল। সেখানে মানুষের উপস্থিতি খুবই নগন্য। তখনকার শিল্পের সব মানব শিশুই যিশুখ্রিস্টের প্রতিমূর্তি ছিল। এই মধ্যযুগের শেষভাগে মানবতাবাদের ধারণা গড়ে ওঠে। এই মানবতাবাদই রেনেসাঁর জন্ম দেয়। শিল্পকলায় ধর্মের চেয়ে মানুষের প্রাধান্য বাড়তে থাকে।

যে চারটি শিল্পকর্মের কথা বলছিলাম, তাদের মধ্যে রাফায়েলেরটা বাদ দিলে বাকী তিনটাতে যে শিশু যিশুকে চিত্রিত করা হয়েছে সেগুলোর কোনোটাই শিশুসুলভ সুন্দর নয়। বরং যথেষ্ট কুৎসিত ও কদাকার। আসলে মধ্যযুগের শিল্পকর্মে শিশুরা কখনোই সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়নি- তা সে যিশুখ্রিস্ট হোক বা কোনো স্বর্গীয় দূত হোক।  

মুধ্যযুগের শিল্পকলায় খ্রিস্টান ভিক্ষুদের অবদান সবচে বেশি। তারা আশ্রমে বসবাস করতো। তাদের সাথে বাইরের লোকজন, বিশেষ করে শিশুদের জানাশোনা কম ছিল। ফলে সে সময়কালে চিত্রকল্পে শিশুদের দেহ ও মাথার আকারের মধ্যে আনুপাতিক জ্ঞান কম ছিল।

সাধারণতঃ ১ বছর বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে মাথার আকার দেহের আকারের ১/৪ হয় আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে সেটা ১/৭ অংশ। এই হিসাবটাই মধ্যযুগের চিত্রকর্মে বেশ অনুপস্থিত। রাফায়েলের চিত্রের সাথে মধ্যযুগের আরেকটি চিত্রকর্মে শিশুর দেহ ও মাথার আনুপাতিক হিসাবে বোঝার জন্য ৫ম ছবিটি লক্ষ্য করতে পারেন।

আসলে মধ্যযুগীয় চিত্রকর্মে যিশুশিশুদের মাথা বয়ষ্কদের মতো ১/৭ হিসেবে আঁকা হয়েছে। এর পেছনে আরেকটি কারণ রয়েছে। সে সময়কালে চিত্রিত কোনো যিশু আসলে শিশু নয়। যিশুকে পূর্ণাঙ্গ মানব রূপে চিত্রিত করা হতো। এ রূপকে বলে হোমোনকুলাস (homunculus)। এর অর্থ ‘ক্ষুদ্র মানব’। প্রচলিত শব্দে বামন বা বাটুল বলতে সহজে বোঝা যায়।

child head proportion in European medieval art

মধ্যযুগের সকল যিশুশিশু এক জন পূর্ণাঙ্গ ক্ষুদ্র মানব। বামন হিসেবে চিত্রিত ঐ সব যিশুশিশু সে জন্য দেখতে খানিকটা কিম্ভূতকিমাকার।

মধ্যযুগের চিত্রকলায় নারী অবয়বের সৌন্দয়ের ধারণাতেও ভিন্নতা ছিল। গভীর শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ দিয়ে চিত্রিত যিশুমাতা মেরি সদাই বিষন্ন ও রোগা-পাতলা। তাঁর কপাল চওড়া। তাঁর ভ্রু ও স্তন নেই বললেই চলে। নারীদেহের সেই নন্দনতত্ত্বে পরবর্তীকালে অনেক পরিবর্তন এসেছে। রাফায়েলের চিত্রিত মেরি তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।