‘এক ফুলে চার রং ধরেছে’ গানটিতে লালন দেহতত্ত্ব ও নবীতত্ত্বের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। এই গানের বিষয়বস্তু ‘ফুল’। তবে সে ফুল সাধারণ ফুল নয়, নূরের ফুল। তিনি নারীর ডিম্বকে রূপক অর্থে ‘ফুল’ বলেছেন।
“এক ফুলে চার রং ধরেছে
ও সে ভাব নগর ফুলে
কি আজব শোভা করেছে।।”
লালনগীতির ব্যাখ্যা – ঋতুকালে নিঃসৃত ডিম্বে নারীগর্ভ সৃষ্টির নেশায় অপরূপ সাজে সেজেছে।
‘চার রং’ – বাউলতত্ত্ব মতে, ঋতুকালের প্রথম চার দিনের রজঃস্রাবের চার রং- কালো, সাদা, লাল ও হলুদ।
‘ভাবনগর’ – নারীগর্ভ
অধিকন্তু, এই চার রং মানবদেহের চার রেচন (‘চারি চন্দ্র’)- মল, বীর্য, রক্ত ও মূত্র;
অথবা, পৃথিবী সৃষ্টির চার উপাদান (মাটি, বায়ু, আগুন ও পানি);
অথবা, সুফিবাদের চার প্রধান তরিকা (কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দিদিয়া) নির্দেশ করে।
মূল ছাড়া সে ফুলের লতা
ডাল ছাড়া তার আছে পাতা
এ বড় অকৈতব কথা
কে পেতাবে কই কার কাছে।।
লালনগীতির ব্যাখ্যা – নারীর ডিম্বের অবয়বের চিত্রকল্প। তিনি কার কাছে এ সত্য তুলে ধরবেন? কে তাকে বিশ্বাস করবে? ‘অকৈতব’ – বলা যায় না এমন সত্য ‘কে পেতাবে’ – কে বিশ্বাস করব
কারণ বারির মধ্যে সে ফুল
ভেসে বেড়ায় একূল ওকূল
শ্বেত বরণ এক ভ্রমর ব্যাকুল
সে ফুলের মধুর আশে।।
লালনগীতির ব্যাখ্যা – নারীর ডিম্ব যখন নারীগর্ভ জুড়ে ঘুরে বেড়ায়, তখন পুরুষের বীর্য সে নারীর ডিম্বের সাথে মিলনের আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
‘শ্বেত বরণ ভ্রমর’ – পুরুষের বীর্য
ডুবে দেখ মন দেল দরিয়ায়
যে ফুলে নবির জনম হয়
সে ফুল তো সামান্য ফুল নয়
লালন কয় যার মূল নাই দেশে।।
লালনগীতির ব্যাখ্যা – এ স্তবকে গানটির মূল কথা বলা হয়েছে। নারীর ডিম্ব কোনো সাধারণ ফুল নয়। এ ‘ফুল’ নূরের ফুল। পৃথিবীতে একে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আল্লাহর নির্দেশে সে নূর পিতা আব্দুল্লাহ থেকে মা আমিনার গর্ভে সঞ্চারিত হয়েছিল। নূরের সেই ফুলে মহানবী (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
গানটির ভিডিও ও ইংরেজি অনুবাদ দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-
One thought on “লালনগীতির ব্যাখ্যা – এক ফুলে চার রং ধরেছে”