লালনগীতির ব্যাখ্যা – ‘ধরো চোর হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতে’ এ লালনগীতির ব্যাখ্যায় বলা যায় এ গানটির মূল বিষয়বস্তু শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ বা প্রাণায়াম। সম্পূর্ণ গানটি ‘চোর’ শব্দকে কেন্দ্র নিয়ে রচিত।

মূলতঃ শ্বরবিজ্ঞানে মানবদেহে অবস্থানকারী সত্তাদের ‘স্বর্গীয় চোর’ বলে। এরা দুই ধরনের – বৈকুণ্ঠে আত্মগোপনকারী উপাস্য চোর (সাঁই ও কাঁই) ও মনে আত্মগোপনকারী রিপু চোর (কাম, ক্রোধ ইত্যাদি)।

ধরো চোর হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতে

সেকি সামান্য চোরা ধরবি কোনা কানচিতে।”

‘হাওয়ার ঘরে ফাঁদ পেতে’ অর্থ প্রাণায়াম সাধনা করে। প্রাণায়াম সাধনায় সাঁইকে (সহজ মানুষ, চোর) ধরতে হবে। সে সাধারণ কেউ নয় যে, তাঁকে যেখানে সেখানে পাওয়া যাবে।

“পাতালে চোরের বহর দেখায় আসমানের উপর
তিন তারে হচ্ছে খবর শুভাশুভ যোগমতে।।”

সাধনতত্ত্ব মতে, মানবদেহে সাতটি চক্র আছে। এ গানে ‘পাতাল’ হলো সর্বনিম্ন ‘মূলাধার চক্র’ এবং ‘আসমান’ হলো সর্বোচ্চ ‘সহস্রার’ চক্র। ‘তিন তার’ মানব শরীরের তিনটি প্রধান পথ (নাড়ি) – বামের উজান নাড়ি ইড়া, ডানের ভাটির নাড়ি পিঙ্গলা ও মধ্যপথের নাড়ি সুষুম্না। ‘চোরের বহর’ মানব মনের ষড়রিপু।

ষড়রিপুগুলো সর্বনিম্ন মূলাধার চক্র হতে সর্বোচ্চ সহস্রার চক্রে ভীড় করে। ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না আমাদেরকে সাধনমার্গে গমনের উপযুক্ত সময় বলে দেয়।

“কে বা চোর, কে বা সেনা কে করে ঠিক ঠিকানা
হাওয়ায় তার বারামখানা হাওয়া মূলাধার তাতে।।”

হাওয়ার মাঝে হাওয়ার ঘরে সাঁই থাকেন নিভৃতে অগোচরে।

“চোর ধরে রাখবি যদি হৃদগারদ কর গা খাঁটি

লালন কয় খুঁটিনাটি থাকতে কি চোর দেয় ছুঁতে।।”

মনে সামান্যতম কালিমা থাকলেও সাঁইকে মনের ঘরে আটকানো যাবে না।

গানটির ভিডিও ও ইংরেজি অনুবাদ দেখতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-

লালনগীতির ব্যাখ্যা – মায়েরে ভজিলে হয় সে বাপের ঠিকানা

লালনগীতির ব্যাখ্যা – তিন পাগলের মেলা গানের ব্যাখ্যা

লালনগীতির ব্যাখ্যা – চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে গানের ব্যাখ্যা

লালনগীতির ব্যাখ্যা – এক ফুলে চার রং ধরেছে গানের ব্যাখ্যা