মনোমোহন দত্ত ও মলয়াগীতি

মনোমোহন দত্ত ও মলয়াগীতি পরিচিতি। মনোমোহন দত্ত একজন মরমী সাধক ও ভাবসঙ্গীতকার। ‘মনোমোহন সাধু’ নামে তিনি পরিচিত। তাঁর রচিত গানের সংকলন ‘মলয়াগীতি’ নামে পরিচিত।

মনোমোহন দত্ত (১৮৭৭-১৯০৯) একজন মরমী সাধক, কবি ও ভাবসঙ্গীতকার। ‘মনোমোহন সাধু’ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর রচিত গানের সংকলন ‘মলয়াগীতি’ নামে পরিচিত।

মনোমোহন দত্ত ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার অর্ন্তগত সাতমোড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নাম পদ্মনাথ দত্ত ও মাতা হর মৌহিনি। মনমোহন দত্তের পূর্বপুরুষরা সোনারগাঁও ভট্টগ্রামের জমিদার ও এ অঞ্চলের প্রধান সাঁজওয়াল ছিলেন। সাঁজওয়াল বলতে সে সময় যারা বাদশাদের সৈন্য সামন্ত যোগান দিত তাদের বোঝায়। পরে ঐ বংশের একটা অংশ সাতমোড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করে।

মনোমোহন দত্ত‘ নিষ্কাম ধর্ম’ প্রবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন। তাই তিনি কবিতা, প্রবন্ধ ও গানের মধ্যে সমকালীন নানা কুসংস্কার, সামাজিক বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতাসহ বিভিন্ন কুপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তুলে ধরেন। তাঁর গানে স্রষ্টা ও সৃষ্টির অলৌকিক সর্ম্পক ও খুব সাবলীলভাবে ফুটে ওঠে।

চট্টগ্রাম মাইজভান্ডারের পীর মাওলানা আহমদউল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে তিনি তাঁর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হন। মাইজভান্ডারের পরিবেশ তাঁকে আধ্যাত্ম সঙ্গীত রচনায় উদ্বুদ্ধ করে। পরবর্তীকালে মাইজভান্ডারের অনুসারীরা মনমোহনের ভাব সঙ্গীতের দ্বারা বেশ প্রভাবিত হয়।

মনোমোহন দত্ত মাত্র ৩২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তবে ২০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি ১০০০ কবিতা নিয়ে ‘তপোবন’, ‘উপবন’, ‘নির্মাল্য’ নামে তিনটি কাব্য লেখেন।

এছাড়া তিনি ‘প্রেম ও প্রীতি’, ‘পথিক’, ‘সত্যশতক’, ‘ময়না’, ‘যোগ-প্রণালী’, ‘উপাসনাতত্ত্ব’ ও ‘খনি’ নামে আত্মতত্ত্ব বিষয়ক এবং ‘সর্বধর্মতত্ত্বসার’ নামে তত্ত্ববিষয়ক গ্রন্থ লিখেন।

মনোমোহন দত্তের মৃত্যুর পর ‘মলয়া’ নামে সঙ্গীত গ্রন্থ প্রকাশ পায়। তিনি প্রায় হাজারখানেক গান লিখেছেন। মনমোহন দত্তের লেখা গানগুলো সুর দিয়েছেন ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ এর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আফতাব উদ্দিন খাঁ, ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খাঁ, নিশিকান্ত সেন ও লবচন্দ্র পাল।

মনোমোহন দত্তের গানগুলো ‘মলয়া সঙ্গীত’ নামে পরিচিত। ‘মলয়া’ আধ্যাত্মিক গান। এগুলো মূলতঃ সর্বধর্ম সঙ্গীত। তিনি বিশ্বাস করতেন, সর্বধর্ম সমন্বয় করে প্রত্যেক সাধক জীবনে স্বর্গীয় সুখ পেতে পারে। তাই তিনি সঙ্গীতের এ ধারার মধ্য দিয়ে তিনি সকল ধর্মের মিলন স্থাপনের চেষ্টা করেন।

মনোমোহন দত্ত নিয়মিত কুরআন ও বাইবেল পড়তেন। বেদ-বেদান্তেও তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী মৃত্যুর পরে তাঁর লাশ কবর দেওয়া হয়।

One thought on “মনোমোহন দত্ত ও মলয়াগীতি – সংক্ষিপ্ত বিবরণ”